টেলিভিশন উপস্থাপক ও বিশ্লেষক জিল্লুর রহমান (Zillur Rahman) বলেছেন, সরকারকে বুঝতে হবে—শুধু বিবৃতি দিয়ে রাজনীতি করা যায় না। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) এক আলোচনায় তিনি বলেন, নির্বাচনের সম্ভাবনা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশের মানুষ ক্রমেই অনিশ্চয়তায় পড়ছে।
নির্বাচন ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা
ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ঈদুল আজহার আগে ভাষণে এপ্রিলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ইঙ্গিত দিলেও পরবর্তীতে তারেক রহমান (Tarique Rahman)–এর সঙ্গে লন্ডনের বৈঠকের পর সময়সীমা ফেব্রুয়ারিতে এগিয়ে আনার আভাস পাওয়া যায়। তবে নির্বাচন আদৌ হবে কি না, হলে তা কেমন হবে, সেই প্রশ্ন এখনও অনিরসন।
বিএনপির কৌশল ও ইউনূসের প্রতি অনাস্থা
জিল্লুর রহমান বলেন, “বিএনপি একটি ফাঁদে পড়েছে। তারা ডিসেম্বরের বদলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায়, অথচ সরকার কখনোই সেটা নিশ্চিতভাবে বলেনি।” তিনি উল্লেখ করেন, বিএনপির দাবি অনুযায়ী যার পদত্যাগ প্রয়োজন, সেই ব্যক্তির সঙ্গেই তারা বৈঠক করেছে।
তিনি আরও বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া (Khaleda Zia) দুঃসময়ে অনেক সহ্য করেছেন, কিন্তু প্রফেসর ইউনূস কখনোই তার পাশে দাঁড়াননি। এমনকি ফোনও করেননি।”
নিরপেক্ষতা ও নির্বাচন কমিশনের প্রশ্ন
জিল্লুর রহমান বলেন, ইশরাক হোসেন (Ishraq Hossain)–এর মেয়র হিসেবে শপথ না নেওয়ার ঘটনায় ড. ইউনূসের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিএনপি শুরু থেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে আসছে। তিনি জানান, “তারেক রহমান বলেছেন ভবিষ্যতে সরকার গঠন করলে ইউনূসকে কাজে লাগানো হবে—এই মন্তব্য যদি সত্য হয়, তবে তা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।”
জামায়াত ও এনসিপির অবস্থান
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizen Party (NCP)) এবং জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami) নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছে। জামায়াত তো একধাপ এগিয়ে নির্বাচন জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আয়োজনের দাবি তুলেছে।
হুদার ঘটনা ও সরকারের প্রতিক্রিয়া
সাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদা (KM Nurul Huda)–র ওপর হামলার ঘটনা এবং সরকারের বিবৃতি-নির্ভর প্রতিক্রিয়া নিয়েও সমালোচনা করেন জিল্লুর। “গত ১০ মাসে ১৬টি সহিংসতার পরে সরকারের প্রতিক্রিয়া ছিল একই রকম—শুধু বিবৃতি। বাস্তব কোনো পদক্ষেপ নেই। এভাবেই সরকার এখন ‘বিবৃতি দানকারী সরকার’-এ পরিণত হয়েছে,” বলেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতির ঘাটতি
জিল্লুর রহমান বলেন, নির্বাচন আয়োজনের জন্য সময়সাপেক্ষ নানা কাজ থাকলেও এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নেই। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নিয়মিত বৈঠক হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মাহাথিরের মন্তব্য ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ
মাহাথির মোহাম্মদ (Mahathir Mohamad) বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বলে জানান জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, “ইউনূসকে প্রশংসা করলেও মাহাথির বলছেন, শেখ হাসিনাকে হটাতে ঐক্য ছিল, কিন্তু এরপর কী হবে সে বিষয়ে কোনো ঐক্য নেই।”
উপসংহার
জিল্লুর রহমান বলেন, “সরকারকে বুঝতে হবে, এখন আর বিবৃতির সময় নয়—এখন সিদ্ধান্তের সময়। একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ এবং বাস্তব ভিত্তিক সমাধান ছাড়া জনগণের আস্থা ফিরে আসবে না।”