সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হাবিবুল আউয়াল (Habibul Awal) এর সাম্প্রতিক আদালত-ভিত্তিক মন্তব্যকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সাংবাদিক ও বিশ্লেষক মাসুদ কামাল (Masud Kamal) হাবিবুলের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “তিনি যদি নির্বাচনের প্রকৃত অবস্থা না বুঝে দায়িত্ব নিয়েই থাকেন, তবে তা সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য।”
‘জানলে দায়িত্ব নিতাম না’—এই বক্তব্যে বিতর্ক
গত ৭ জানুয়ারির বিতর্কিত একতরফা নির্বাচনের প্রধান কারিগর হিসেবে পরিচিত হাবিবুল আউয়াল আদালতে বলেন, “এত ভয়ংকর নির্বাচন হবে জানলে দায়িত্বই নিতাম না।”
মাসুদ কামালের মতে, এই বক্তব্য দায়িত্ব এড়ানোর কৌশল মাত্র। তিনি বলেন, “একজন সচিব ও সিইসি হিসেবে তিনি খুব ভালো করেই জানতেন নির্বাচনের অবস্থা কী হতে চলেছে। যেখানে বিরোধী দলই নেই, প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব ঘোষণায় সব প্রার্থী একই দলের, সেখানে কীভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে?”
পদত্যাগ করলে ইতিহাসে সাহসী চরিত্র হিসেবে থাকতেন
আদালতে হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, এক বন্ধু তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন কেন পদত্যাগ করেননি। উত্তরে তিনি বলেন, ‘সেই অবস্থায় পদত্যাগ সম্ভব ছিল না।’
এই বিষয়ে মাসুদ কামালের প্রতিক্রিয়া ছিল, “তিনি যদি লিখে দিতেন ‘এই নির্বাচন জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না’, তাহলে ইতিহাসে একজন সাহসী মানুষ হিসেবে নাম লিখাতেন। কিন্তু তিনি থেকে গেছেন—সুযোগ-সুবিধা ও ক্ষমতার মোহেই।”
নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্ব ও চরম স্বীকারোক্তি
হাবিবুল আউয়াল বলেন, “নির্বাচন কমিশনের হাতে প্রশাসন নেই, প্রশাসন যেভাবে চাইবে রেজাল্ট দেবে।” এই বক্তব্যকে মাসুদ কামাল আখ্যা দেন ‘এক মিলিয়ন ডলারের মন্তব্য’। তিনি বলেন, “ভবিষ্যতের নির্বাচনগুলোও এমনই হবে—যে দল ক্ষমতায় থাকবে, প্রশাসন চাপে পড়ে সেই দলের হয়েই কাজ করবে।”
এছাড়া, সাবেক সিইসি দাবি করেন, “মৌলিক সংস্কার ছাড়া আগামী ১০০০ বছরেও বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।” কিন্তু এই সংস্কার কারা করবে, সেই প্রশ্নে হাবিবুল কোনো উত্তর দেননি বলে উল্লেখ করেন মাসুদ কামাল।
ড. ইউনূসের ‘সংস্কার’ এবং প্রশ্নের মুখে তার বিশ্বাসযোগ্যতা
ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) কে ঘিরেও প্রশ্ন তোলেন মাসুদ কামাল। তিনি বলেন, “ড. ইউনূস গত ১০ মাসে সংস্কার বলতে কিছুই করতে পারেননি। জনগণের ভিতর থেকে পরিবর্তনের যে পরিবেশ গড়ে তোলা প্রয়োজন, সেটা তার দ্বারা হয়নি।”
ড. ইউনূসের নির্বাচন নিয়ে দেওয়া মন্তব্য—‘আগামী নির্বাচন হবে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নির্বাচন’—এ প্রসঙ্গে মাসুদ কামাল বলেন, “যে ব্যক্তি এমন কথা বলেন, তিনি ইতিহাস, নির্বাচন এবং শ্রেষ্ঠ—এই তিনটির কোনোটাই বোঝেন না।”
অতীতকে ঢাল বানিয়ে দায়িত্ব এড়ানো যাবে না
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনও সুষ্ঠু ছিল না এবং শেখ মুজিবুর রহমান (Sheikh Mujibur Rahman) ক্ষমতার লোভ সামলাতে পারেননি। এ সময় প্রসিকিউটরের কড়া প্রতিক্রিয়ার পর তিনি বলেন, “জাস্টিফাই করতে না দিলে রিভলভার দিয়ে গুলি করে ফেলেন।”
মাসুদ কামালের মন্তব্য, “এই ধরনের উত্তেজনাপূর্ণ ও দায়িত্ব এড়ানো বক্তব্যে প্রমাণিত হয়, সাবেক সিইসি একজন ব্যর্থ কর্মকর্তা, যিনি নিজের ব্যর্থতা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাচ্ছেন।”