বিএনপির ধারাবাহিক চীন সফর: নতুন কূটনৈতিক সমীকরণ নাকি ভবিষ্যতের প্রস্তুতি?

বিএনপি (BNP) এবং চীন (China)–এর মধ্যকার সম্পর্ক সম্প্রতি এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের পতনের পর এক বছরে বিএনপির তিন দফা চীন সফর কেবল রাজনৈতিক সৌজন্য নয়, বরং বৃহত্তর কৌশলগত ও অর্থনৈতিক বার্তা বহন করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তিন দফা সফর ও গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক

সবশেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir)–এর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল চীন সফর শেষে দেশে ফিরেছে। এর আগের দুটি সফর পরিচালনা করেন বিএনপির নেতারা আসাদুজ্জামান খান রিপন (Asaduzzaman Khan Ripon) এবং আবদুল মঈন খান (Abdul Moyeen Khan)।

চীন সফরে বিএনপি নেতারা বৈঠক করেন চীনের পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী সান ওয়েইডং, কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও এবং ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস (National People’s Congress)–এর ভাইস চেয়ারম্যান লি হংঝং–এর সঙ্গে।

চীনের গুরুত্ব ও কৌশলগত বার্তা

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (Goyeshwar Chandra Roy) জানান, সরকার গঠন করলে চীনের সঙ্গে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চায় বিএনপি এবং এ বিষয়ে চীন ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (Shahjalal University of Science and Technology)–এর পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ-চীন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ড. সাহাবুল হক (Dr. Shahabul Haque) বলেন, এই সময়টা চীনের জন্য একটি “অপর্চুনিটি উইন্ডো”, যেহেতু বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কিছুটা শীতল হয়েছে।

অর্থনৈতিক কূটনীতি ও সহযোগিতার প্রত্যাশা

বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ প্রায় ৪২ বিলিয়ন ডলার। অবকাঠামো, বন্দর, রফতানি এবং টেলিকম খাতে চীনের সক্রিয়তা রয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকেও চীনের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন গয়েশ্বর রায়।

মুন্সী ফয়েজ আহমদ (Munshi Faiz Ahmad), বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত, মনে করেন— চীন জানতে চাচ্ছে, সরকার পরিবর্তনের পর তাদের স্বার্থ কীভাবে সুরক্ষিত থাকবে। তাঁর মতে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখা বাংলাদেশের ভৌগোলিক নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যদিও চীন অর্থনৈতিক সহযোগিতা দিয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে চাইছে।

ভৌগোলিক রাজনীতি ও চীনের আঞ্চলিক আগ্রহ

সম্প্রতি বাংলাদেশ (Bangladesh), চীন এবং পাকিস্তান (Pakistan)–কে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আঞ্চলিক জোট গঠনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ভারতের জন্য একটি বার্তা হিসেবেও কাজ করছে।

ভবিষ্যতের জন্য বিএনপির প্রস্তুতি?

বিএনপি মনে করে, চীনের সঙ্গে দলীয় সম্পর্ক জোরদার করে তারা সরকার গঠনের ক্ষেত্রে একটি নিরব সমর্থন নিশ্চিত করতে চাইছে। এছাড়া উন্নয়ন সহযোগিতা যেন অব্যাহত থাকে, সেজন্য এখন থেকেই সম্পর্ক দৃঢ় করা হচ্ছে।

বিবিসি (BBC) সূত্রে জানা গেছে, দলটি চায় বর্তমান অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে ভবিষ্যতে আরও টেকসই করতে।