জাতীয় ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতির ঘাটতির কথা স্বীকার করেছেন আলী রীয়াজ (Ali Riaz)। রবিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমি (Foreign Service Academy) তে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের (National Consensus Commission) দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপের সপ্তম দিনের সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমরা খানিকটা পিছিয়ে আছি।”
আলোচনার অগ্রগতি ও সীমাবদ্ধতা
আলী রীয়াজ বলেন, কমিশনের মূল লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়ে কাঠামোগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। তিনি উল্লেখ করেন, “আপনাদের কর্মীরা রক্ত দিয়েছেন, নিপীড়নের শিকার হয়েছেন—সেই আত্মত্যাগের ভিত্তিতেই আমরা এগোচ্ছি।”
তিনি জানান, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ ও সংসদের উচ্চকক্ষ (Upper House) নিয়ে কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে অনেক দূর অগ্রসর হওয়া গেছে। উচ্চকক্ষে রাষ্ট্রপতির মনোনয়নের প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি থাকায় তা সংশোধন করে ১০০ সদস্যের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে।
লক্ষ্য জুলাই মাসেই জাতীয় সনদ
আলী রীয়াজ বলেন, “জুলাই মাসের মধ্যেই আমরা একটি জাতীয় সনদে পৌঁছাতে চাই। আবু সাঈদের শাহাদতবার্ষিকীতে তা বাস্তবায়নের স্বপ্ন ছিল। সেটা এখন দলগুলোর ওপর নির্ভর করছে।”
সাংবিধানিক নিয়োগ কমিটি নিয়ে মতপার্থক্য
আজকের আলোচনায় ছিল সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি (Appointment Committee), দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও উচ্চকক্ষের দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা। কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে রাষ্ট্রপতির কাছে দুটি নাম প্রস্তাব করার কথা বলা হয়।
তবে এনসিপি (NCP) এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি (Revolutionary Workers Party) এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। আলোচনার প্রতিক্রিয়ায় আলী রীয়াজ বলেন, “ফ্লোরে যদি একজনের নাম প্রস্তাবের বিষয়ে সম্মতি থাকে, তাহলে সেটাও বিবেচনায় নেওয়া হবে।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিয়োগ কমিটি রাখার প্রস্তাব
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিয়োগ কমিটি বহাল রাখার প্রস্তাব দেয় কমিশন। তবে এতে মতবিরোধ দেখা দেয়। জামায়াতে ইসলামীর (Jamaat-e-Islami) সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ (Hamidur Rahman Azad) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নিয়োগের প্রস্তাব করেন।
মতভেদ ও সমর্থন
এনডিএম (NDM) ও এনপিপি (NPP) এই কমিটির বিরোধিতা করলেও, পক্ষে অবস্থান নেয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (Islami Andolon Bangladesh), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (Bangladesh Khelafat Majlish), বাসদ (মার্কসবাদী) (BASAD (Marxist)), সিপিবি (CPB) এবং বাসদ (BASAD)।
এনপিপির আপত্তি ও রাজনৈতিক ইঙ্গিত
এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (Fariduzzaman Farhad) অভিযোগ করেন, এ কমিটি একটি নির্দিষ্ট দলকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, “গত ৫৩ বছরে একমাত্র আওয়ামী লীগের (Awami League) শাসনেই ফ্যাসিবাদী অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।”
উল্লেখ্য, আজকের আলোচনার সময় বিএনপি (BNP) কোনো বক্তব্য দেয়নি।