বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) (Bangladesh Cricket Board (BCB))-এ অধিনায়কত্ব ঘিরে চলমান নাটকীয়তা ও সিদ্ধান্তহীনতার সমালোচনা করেছেন সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ (Faruk Ahmed)। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ঘিরে নাজমুল হোসেন শান্ত (Najmul Hossain Shanto)কে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ (Mehidy Hasan Miraz)কে দায়িত্ব দেওয়ার ঘটনায় বোর্ডের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা আরও স্পষ্ট হয়েছে।
অধিনায়কত্ব থেকে সরানোর প্রক্রিয়াতেই নেই পেশাদারিত্ব
ঘটনার শুরু, শান্ত যখন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন, ঠিক তখনই তাকে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়—যার খবর তিনি সংবাদ সম্মেলন শেষে বোর্ডে গিয়ে জানতে পারেন। ক্রিকেট অপারেশন্স রুমে উপস্থিত কোচ ফিল সিমন্স দল চূড়ান্ত করার অপেক্ষায় ছিলেন, অথচ শান্ত জানতেনই না—তিনি অধিনায়ক নন।
বলা হচ্ছে, শান্ত আগেই টেস্ট ও ওয়ানডে অধিনায়কত্ব রেখে কেবল টি-টোয়েন্টির দায়িত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন। তৎকালীন সভাপতি ফারুক আহমেদের অনুরোধে তিনি সেই সিদ্ধান্তে সম্মতও হয়েছিলেন। অথচ তার সঙ্গে কোনো সম্মতি ছাড়াই আচমকা অধিনায়কত্ব পরিবর্তন করা হয়।
অপারেশন্স প্রধানের ব্যর্থতা ও বোর্ডের যোগাযোগ বিভ্রাট
ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদিন ফাহিম (Nazmul Abedeen Fahim) এ সিদ্ধান্ত শান্তকে জানানোর জন্য সময়মতো একটি ‘জুম মিটিং’ও করতে পারেননি। পরবর্তীতে গণমাধ্যমে দাবি করেন, “শান্ত মন খুলে সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন।” তবে বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন—শান্ত ছিলেন এতটাই ক্ষুব্ধ যে, সঙ্গে সঙ্গেই টেস্ট নেতৃত্ব থেকেও সরে যেতে চেয়েছিলেন।
সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শেষেই শান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন—যা বোর্ডকেও বিব্রত করে। ফাহিম পরে বলেন, “ঘোষণা আজই দেবে ভাবিনি। তাই বিকল্প ভাবা হয়নি।”
ফারুকের অভিযোগ: বোর্ডের পরিকল্পনায় গলদ, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা প্রকট
সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেন, “মিরাজ অধিনায়ক হতে পারত, কিন্তু শান্তকে এভাবে বাদ দেওয়া একেবারেই ঠিক হয়নি। এসব হুটহাট সিদ্ধান্ত দলে অস্থিরতা আনে।”
তিনি আরও বলেন, “অধিনায়কের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার রীতি আমি চালু করেছিলাম। কিন্তু এখন অপারেশন্স বিভাগ সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ খেলোয়াড়দের মানসিকতা বুঝতে।”
নতুন সভাপতি আমিনুল ইসলাম (Aminul Islam) দায়িত্ব নিয়েছেন মাত্র এক মাস। তার দায়িত্ব গ্রহণের পরই ঘটে শান্ত ইস্যু। ফারুক সরাসরি আমিনুলকে দায় না দিলেও প্রশ্ন তোলেন, “ফাহিম প্রতিটা বিদেশ সফরে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি কী করেন? খেলোয়াড়দের মানসিকতা বুঝতে পারেন কি? শান্তর পদত্যাগও তো আঁচ করতে পারেননি।”
বিসিবিতে অভ্যন্তরীণ সমন্বয়হীনতা এবং নেতৃত্বের সংকট
এই ঘটনার ধারাবাহিকতায় বোর্ডের ভেতরে যে অসংগতি, অনিশ্চয়তা এবং নেতৃত্বের সংকট তা আরও একবার প্রকাশ পেয়েছে। পেশাদার যোগাযোগ, সময়োচিত সিদ্ধান্ত এবং খেলোয়াড়দের মানসিক অবস্থার প্রতি সম্মান না দেখালে নেতৃত্বে স্থিতিশীলতা কখনোই আসবে না—এমন অভিমতই দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।