সাংবাদিক ও কলামিস্ট আনিস আলমগীর (Anis Alamgir) সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ‘ম্যাগাজিন কাণ্ড’ প্রসঙ্গে আসিফ মাহমুদের (Asif Mahmud) আচরণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক সমালোচনামূলক স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
ফেসবুকে দেওয়া এই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ঘটনাটি শুধু ভুল নয়, বরং এটি দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, আইন ভঙ্গ এবং আত্মপ্রবঞ্চনার প্রতিচ্ছবি। আনিস আলমগীর তাঁর স্ট্যাটাসে আসিফ মাহমুদের অতীত কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক আচরণ এবং সাম্প্রতিক বিমানবন্দরে আগ্নেয়াস্ত্রের ম্যাগাজিনসহ ধরা পড়ার প্রসঙ্গে বিস্তৃতভাবে মত প্রকাশ করেন।
“ভবিষ্যতের পচা রাজনীতির নমুনা আগে থেকেই ছিল”
আনিস আলমগীর স্মৃতিচারণ করে জানান, গত বছরের জুলাই মাসে কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় একটি টকশোতে তাঁর সঙ্গে প্রথম দেখা হয় আসিফ মাহমুদের। সে সময় আসিফকে সাধারণ ও সাদাসিধে মনে হলেও, শো শেষে তাঁর ভিড় করা অনুসারী-কর্মী দেখে ভবিষ্যতের প্রদর্শন-নির্ভর রাজনীতির ইঙ্গিত পেয়েছিলেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ধর্ষণ মামলা ও বিএনপির অভিযোগেও নির্বিকার আসিফ
আলমগীর তার পোস্টে আরও উল্লেখ করেন, আসিফের এলাকায় মুরাদনগর (Muradnagar) একটি ধর্ষণের ঘটনায় তার কোনো বক্তব্য বা অবস্থান দেখা যায়নি। একইসঙ্গে তিনি বিএনপির (BNP) মহাসচিব মির্জা ফখরুলের (Mirza Fakhrul) বক্তব্য তুলে ধরেন, যেখানে ফখরুল অভিযোগ করেন, একজন উপদেষ্টা মুরাদনগরে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন।
আলমগীর লিখেন, “ধর্ষক যেই দলেরই হোক, দোষীর বিচার হওয়া উচিত; দলের পরিচয়ে ছাড় দেওয়া নয়।”
অস্ত্রের ম্যাগাজিনসহ বিদেশযাত্রা: আইন লঙ্ঘনের প্রশ্ন
আলোচিত ‘ম্যাগাজিন কাণ্ড’ নিয়ে আনিস আলমগীর লেখেন, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসিফ মাহমুদের ব্যাগে একটি আগ্নেয়াস্ত্রের ম্যাগাজিন পাওয়া গেছে, যা ছিল তার ব্যক্তিগত লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্রের অংশ। তিনি দাবি করেছেন এটি ‘ভুলবশত’ হয়েছে এবং নিরাপত্তার স্বার্থেই তিনি অস্ত্র রাখেন।
আলমগীর প্রশ্ন তোলেন, “এই ঘটনা কি নিছক ভুল, না অহংকারের বহিঃপ্রকাশ? যদি ধরা না পড়ত, তবে কি তিনিই একে ভুল বলতেন?”
তিনি আইন উল্লেখ করে বলেন, “বাংলাদেশের আয়ুধ আইন ১৮৭৮ (Arms Act 1878) এবং Arms Rules ২০১৬ অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক ভ্রমণে কোনো অস্ত্র বা অংশ বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ—বিশেষ অনুমোদন ছাড়া।”
লাইসেন্স কীভাবে পেলেন? বয়স ও আয় নিয়ে প্রশ্ন
আনিস আলমগীর আরও লেখেন, আসিফ মাহমুদের বয়স ৩০-এর নিচে। অথচ আইন অনুযায়ী অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে বয়স হতে হয় অন্তত ৩০ বছর এবং থাকতে হয় ট্যাক্স রিটার্নসহ যৌক্তিক কারণ। প্রশ্ন ওঠে—এই শর্তগুলো কীভাবে পূরণ করেছেন তিনি?
তিনি আরও বলেন, “একজন মধ্যবিত্ত ঘরানার তরুণ কীভাবে হঠাৎ লক্ষাধিক টাকার অস্ত্র কেনেন? উপদেষ্টার বেতন কি এই ব্যয় বহন করে? নাকি দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয় এলজিইডির সুবিধা তার পেছনে?”
আত্মপ্রবঞ্চনা ও ক্ষমতার দম্ভ—রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বিপন্ন
আনিস আলমগীর বলেন, “আসিফ মাহমুদ আগে ছিলেন সদালাপী, সচেতন তরুণ; আজ তার আচরণ, ভাষা, যুক্তি সবকিছুতেই ক্ষমতার অহংকার স্পষ্ট। এটি একজন ব্যক্তির বিষয় নয়, বরং রাষ্ট্রের আইন ও নৈতিকতার প্রশ্ন।”
তার মতে, উচিত ছিল আসিফ মাহমুদের পক্ষ থেকে নিঃশর্ত দুঃখ প্রকাশ এবং আত্মসমালোচনা। কারণ একটি ম্যাগাজিন নয়, বরং এটি দেশের শুদ্ধাচার, আইনের শাসন এবং নাগরিক নিরাপত্তার প্রতি আস্থার পরীক্ষা।