উমামা ফাতেমার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ জাহিদ আহসানের: ‘নেতৃত্ব দাবি, কিন্তু দায়িত্বশীলতা নেই’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (Anti-Discrimination Student Movement) থেকে পদত্যাগের পর উমামা ফাতেমা (Umama Fatema) যখন সংগঠনের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মের অভিযোগ তোলেন, তখনই তাঁর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ আনেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (Bangladesh Democratic Student Council) সদস্যসচিব জাহিদ আহসান (Jahid Ahsan)।

জাহিদের অভিযোগ, নেতৃত্বের সংকট নয়, উমামার দায়িত্বহীনতা ও আদর্শগত অমিল থেকেই সংঘাতের সূচনা। তিনি দাবি করেন, “উমামা দীর্ঘদিন মুখপাত্র থাকলেও সংগঠনের কর্মকাণ্ডে ছিলেন প্রায় অনুপস্থিত। তিন মাস আমি দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলাম, অথচ অর্ধেক মিটিংয়েও তাঁকে পাইনি।”

“কাজ না করেই নেতৃত্ব দাবি করা আত্মপ্রবঞ্চনা”

জাহিদ আহসান অভিযোগ করেন, প্রোগ্রাম, বিবৃতি, মিডিয়া সেল কিংবা সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ—প্রতিটি স্তরেই উমামার কার্যক্রম ছিল নিষ্ক্রিয়। তাঁর ভাষ্য, “উনি বলেন কাজ করতে দেওয়া হয়নি, অথচ প্রতিদিন আমাদের অফিসে শহীদ পরিবার ও আহত আন্দোলনকারীরা আসতেন। এসব সামলাতে গিয়ে আমি হিমশিম খেতাম। উমামা ক’দিন অফিসে এসেছেন, সেটা তাঁর জানা থাকা উচিত।”

তিনি আরও বলেন, “উনি মুখপাত্র ছিলেন, অথচ কোনো প্রস্তাব দেননি। মিডিয়া সেল তাঁর অধীনে ছিল, তবুও কোনো দিন এই সেল নিয়ে আলোচনায় আসেননি। তাহলে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাওয়ার যৌক্তিকতা কোথায়?”

বড় কর্মসূচিতে অনুপস্থিত, অথচ দাবি নেতৃত্বের

জাহিদ উল্লেখ করেন, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস ও ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসে সংগঠন বড় কর্মসূচি পালন করলেও উমামা তাতে অংশ নেননি। “এই প্রোগ্রামগুলো গোপন নয়, এক্সিকিউটিভ মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল,” বলেন তিনি।

তিনি আরও স্মরণ করিয়ে দেন, “একটি মিটিংয়ে উমামা একজন নারী ও একজন পুরুষ নির্বাহী সদস্যকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করেন। এতে আমরা বিস্মিত ও আহত হই।” ভুক্তভোগীদের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

“রাজনীতি ক্যাশ করতে পারিনি”—উমামার বক্তব্য ও জাহিদের জবাব

উমামা তার পদত্যাগপত্রে সংগঠনের নেতৃত্বকে ‘দলীয় প্রেসক্রিপশন’ ও ‘সুবিধাবাদী রাজনীতি’র অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। তিনি লেখেন, “এই প্ল্যাটফর্মটি অভ্যুত্থানের স্বপ্নকে নষ্ট করেছে। আমি রাজনীতি ক্যাশ করিনি—পারিওনি।”

জবাবে জাহিদ বলেন, “আপনি যদি কাজ না করেন, আইডিয়া না দেন, দায়িত্ব না নেন—তাহলে নেতৃত্ব দাবির নৈতিক ভিত্তি থাকে না। আপনি নেতৃত্ব না পেলে সেটা গণতন্ত্রের ব্যর্থতা নয়, বরং আপনার আত্মস্বীকৃত ব্যর্থতা।”

বিতর্কের কেন্দ্রে ভবিষ্যৎ ছাত্র রাজনীতি

এই পাল্টাপাল্টি অভিযোগে সংগঠনটির গ্রহণযোগ্যতা ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠেছে। এটি ব্যক্তিগত বিরোধ, না কি বৃহত্তর ছাত্র রাজনীতির অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত—তা সময়ই বলে দেবে।

উমামা ফাতেমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “জাহিদ আহসান অভিযোগ দিছে তো কী হইছে? এগুলো সব মিথ্যা। আমি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করবো না। আপনারা মিডিয়ার লোকেরা আমাকে বিরক্ত করবেন না।”

উল্লেখ্য, ২৮ জুন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে উমামা পদত্যাগপত্র প্রকাশ করেন। এর আগে গত বছর সেপ্টেম্বরে তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (Bangladesh Student Federation)-এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব পদ থেকেও অব্যাহতি নিয়েছিলেন।