যথাযথ প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছে শেখ হাসিনার বিচার: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (International Crimes Tribunal)–এ জুলাই গণহত্যা (July Genocide) মামলায় অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) বিচার প্রক্রিয়া যথাযথ গতিতে এবং ন্যায়বিচারের মানদণ্ড বজায় রেখে এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম (Mohammad Tazul Islam)।

সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “এই বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো তাড়াহুড়ো নেই, আবার বিলম্বও করা হচ্ছে না। যতটুকু সময় প্রয়োজন, সেই অনুযায়ীই আদালতের নির্দেশে বিচার এগোচ্ছে।”

আগামীকাল অভিযোগ গঠন শুনানি

আগামী ১ জুলাই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। গত ২৪ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার (Golam Mortuza Majumder)–এর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (Asaduzzaman Khan Kamal) এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন (Chowdhury Abdullah Al-Mamun)–এর বিরুদ্ধে এ শুনানির দিন নির্ধারণ করেন।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “এই মামলায় ন্যায়বিচার বজায় রাখাই আমাদের মূল লক্ষ্য। বিচারকে আমরা মোবাইল কোর্টের মতো তড়িঘড়ি করতে চাই না, আবার অনাবশ্যক দীর্ঘসূত্রতাও চাই না। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেই বিচার শেষ হবে।”

তদন্ত প্রতিবেদন ও অভিযোগ গঠন

গত ১ জুন শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঁচটি অভিযোগ ট্রাইব্যুনাল আমলে নেয়। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার (Abdus Sobhan Tarafdar) ও মিজানুল ইসলাম (Mizanul Islam) আদালতে অভিযোগ পড়ে শোনান, যা জাতীয় গণমাধ্যমেও প্রচারিত হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়ে গণহত্যা সংঘটনের নির্দেশদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা। এই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা ১২ মে।

পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ

গত ১৭ জুন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে ট্রাইব্যুনাল নোটিশ জারি করে। এরপর সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি আকারে পলাতক আসামিদের উপস্থিত হতে বলা হয়।

এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল এই মামলার তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেয়। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

“এটি ন্যায়বিচার ও শুদ্ধাচারের প্রশ্ন”

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “এটি কেবল একটি মামলার বিচার নয়—এটি আমাদের জাতির ন্যায়বিচার ও শুদ্ধাচারের মানদণ্ড প্রতিষ্ঠার একটি সুযোগ। আমরা বিশ্বাস করি, এই বিচার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই এগিয়ে যাবে।”