আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি কী ও প্রচলিত ব্যবস্থার সঙ্গে এর পার্থক্য কোথায়?

গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার (Hasina Government) পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারে গঠিত বিভিন্ন কমিশন নতুন প্রস্তাবনা তুলে ধরছে। এসব প্রস্তাবের মধ্যে অন্যতম হলো ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন’ বা পিআর পদ্ধতি, যা বর্তমানে জাতীয় পার্টি (Jatiya Party), জামায়াতে ইসলামি (Jamaat-e-Islami), ইসলামী আন্দোলন (Islami Andolon) এবং কমিউনিস্ট পার্টি (Communist Party) সমর্থন করছে। তবে বিএনপি (BNP) এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে প্রচলিত সংসদীয় পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

পিআর পদ্ধতি কী?

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন বা পিআর একটি ভোটিং ব্যবস্থা, যেখানে সংসদীয় আসন বণ্টন হয় রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত মোট ভোটের আনুপাতিক হারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো দল যদি মোট ভোটের ১০% পায়, তবে সংসদে তারা ১০% আসন পাবে, অর্থাৎ ৩০টি আসন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পিআরের তিনটি ধরন ব্যবহৃত হয়—মুক্ত, গোপন এবং মিশ্র পদ্ধতি।

নির্বাচন বিশ্লেষক অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ (Tofayel Ahmed) বলেন, “পিআর পদ্ধতি চালু হলে দল যত ভোট পাবে, তত আসন পাবে। এতে সুশাসন নিশ্চিত করা সহজ হবে।” তিনি আরও বলেন, এই পদ্ধতিতে সংসদে প্রতিটি ভোটের সমান মূল্যায়ন হয়।

প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা

বর্তমান ব্যবস্থায় বাংলাদেশে ৩০০টি আসনে সরাসরি প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে ভোট হয়। এখানে কোনো প্রার্থী যদি শতকরা ২৫% ভোট পেয়ে সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকে, তাহলে তিনি বিজয়ী হবেন, যদিও বাকি প্রার্থীদের সম্মিলিত ভোট ৭৫% হলেও তা সংসদে প্রতিফলিত হবে না।

এ নিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি দল মাত্র ২৫% ভোটে সরকার গঠন করতে পারে, অথচ বাকি ৭৫% ভোটের প্রতিফলন সংসদে থাকে না। এতে সংসদীয় প্রতিনিধিত্বে ভারসাম্য রক্ষা হয় না।

মহিউদ্দিন আহমদ (Mohiuddin Ahmed) নামের এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “এই পদ্ধতিতে সব দলের ভোটের অনুপাতে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। এমন অনেক দল আছে যারা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ভোট পেলেও বর্তমানে সংসদে আসন পায় না।”

সম্ভাব্য প্রভাব

পিআর পদ্ধতিতে প্রতিটি দলকে ভোটের আগে প্রার্থী তালিকা দিতে হবে। এরপর ভোটের হার অনুযায়ী আসন বণ্টন হবে। এতে একক দলীয় আধিপত্য হ্রাস পেতে পারে এবং বহুদলীয় অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি উৎসাহিত হবে।

যদিও পিআর পদ্ধতিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন অনেক রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষক, তবে বিএনপি (BNP)-র আপত্তির কারণে এর বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। তবে সব রাজনৈতিক দল একমত হলে বাংলাদেশে পিআর পদ্ধতির বাস্তবায়ন সম্ভব হতে পারে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা