‘ডু অর ডাই’ পরিস্থিতিতে গিয়েছিল আন্দোলন: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizens Party)–এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (Nahid Islam) বলেছেন, ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার ইস্যুকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলন একসময় এমন পর্যায়ে পৌঁছায়, যেখানে আন্দোলনকারীদের সামনে ছিল কেবল দুটি পথ—জয় অথবা মৃত্যু। “আমরা তখন এক ‘ডু অর ডাই’ পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম,”—বলেছেন তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (BSS)-কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে।

আন্দোলনের সূচনা ও বিস্তার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (University of Dhaka)-এর সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে গড়ে ওঠা “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের” মুখ্য সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন। আন্দোলনের সূচনা ঘটে ৫ জুন, আদালতের এক রায়ে কোটা পুনর্বহালের পর ছাত্রসমাজে ক্ষোভ সৃষ্টি হলে।

প্রথমে আন্দোলন সীমিত থাকলেও দ্রুত এটি ছড়িয়ে পড়ে জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফেসবুক, অনলাইন মিটিং এবং স্মারকলিপির মাধ্যমে সংগঠিত হয় আন্দোলনের কাঠামো। ১ জুলাই প্রথম কর্মসূচি পালন করে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’।

সহিংসতা ও প্রতিরোধ

১৪ জুলাই রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার দিনই শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) চীন সফর শেষে দেশে ফিরে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য দেন। এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

১৫ জুলাই সংঘটিত হয় ভয়াবহ হামলা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (Dhaka Medical College)-এ আহতদের ওপরও হামলা চালানো হয়। এই হামলায় গুরুতর আহত হন বহু শিক্ষার্থী। ১৬ জুলাই শহীদ হন ছাত্রনেতা আবু সাঈদ। আন্দোলনের গতি আরও তীব্র হয়।

চূড়ান্ত পর্যায়ে উত্তরণ

১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যান। রাতে কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ১৮ জুলাই সাধারণ জনগণ ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নেয়।

২০ জুলাই নাহিদ ইসলাম আবারও শাটডাউন ঘোষণা দেন, যদিও সে ঘোষণা গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়নি। এরপর ২১ জুলাই গভীর রাতে ডিবি পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। অজ্ঞাত স্থানে তার ওপর চালানো হয় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। পরে তাকে পূর্বাচল (Purbachal)-এ ফেলে রেখে যাওয়া হয়।

হেফাজতে নির্যাতন ও চাপ

ডিবি হেফাজতে থাকাকালীন আন্দোলন বন্ধের চাপ দেওয়া হয়। তাকে জোরপূর্বক একটি ভিডিও স্টেটমেন্ট দিতে বাধ্য করা হয় যাতে বলা হয় আন্দোলন শেষ। পরিবার এবং নারী আন্দোলনকারীদের গ্রেফতারের হুমকিও দেওয়া হয়।

তবে আন্দোলনকারীরা এসব প্রোপাগান্ডা বিশ্বাস করেনি। বরং আন্দোলন আরও বেগবান হয়। পরে ১ আগস্ট নাহিদ ইসলাম মুক্তি পান। এরপর ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ঐতিহাসিক একদফা ঘোষণা দেন—স্বৈরাচারী সরকার পতনের চূড়ান্ত আহ্বান।

সরকারের পতন ও বিজয়

৪ আগস্ট রাতেই দেশে কারফিউ জারি করা হয়। ৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর অংশবিশেষ জনগণের পক্ষে অবস্থান নেয় এবং দুপুরে জানা যায় শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। দীর্ঘ ১৬ বছরের স্বৈরাচার পতনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ মুক্তি পায়। সারা দেশে বিজয় মিছিল ও উৎসব শুরু হয়।