ঢাকা মহানগর (Dhaka Metropolitan) সিনিয়র বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব মঙ্গলবার এক আদেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ও তার পরিবারের সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে আদালতে হাজির হওয়ার গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন। প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে দায়েরকৃত পাঁচটি মামলার আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে পলাতক রয়েছেন।
মামলার পটভূমি ও আসামির তালিকা
দুর্নীতি দমন কমিশন (Anti-Corruption Commission)–এর প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম জানান, ৬টি মামলার মধ্যে একটি মামলায় আগেই গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। বাকি ৫ মামলায় ২৩ জন আসামি পলাতক থাকায়, পুলিশ প্রতিবেদন দেওয়ার পর আদালত গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন এবং ২০ জুলাই পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করেন।
গেজেট প্রকাশের নির্দেশপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন:
– সজীব ওয়াজেদ জয় (Sajeeb Wazed Joy) – শেখ হাসিনার ছেলে
– সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (Saima Wazed Putul) – শেখ হাসিনার মেয়ে
– শেখ রেহানা (Sheikh Rehana) – শেখ হাসিনার বোন
– টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক (Tulip Rizwana Siddiq) – ব্রিটিশ এমপি ও শেখ রেহানার মেয়ে
– আজমিনা সিদ্দিক – শেখ রেহানার আরেক মেয়ে
– রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক – শেখ রেহানার ছেলে
– শরীফ আহমেদ (Sharif Ahmed) – সাবেক প্রতিমন্ত্রী
– মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন (Mohammad Salah Uddin) – প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব
তাছাড়া জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় (Ministry of Housing and Public Works) ও রাজউক (RAJUK)–এর বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে, যেমন:
– সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার
– অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন
– প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার
– সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার
– রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা
– সদস্য মো. নুরুল ইসলাম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন
– মেজর (অব.) প্রকৌশলী সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী
– পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম
– উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান
দুর্নীতির বিবরণ
২০২৫ সালের ১২ জানুয়ারি আফনান জান্নাত কেয়া, দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক, একটি মামলার বাদী হয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, ধানমন্ডিতে ফ্ল্যাট থাকা সত্ত্বেও তা গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প থেকে অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দ নেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। এ বিষয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, পূর্বাচলের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রোডের ১৭ নম্বর প্লটটি সায়মা ওয়াজেদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং তিনি সেটি দখল ও রেজিস্ট্রি করেন। এতে সরকারের নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে।
চার্জশিট ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
১০ মার্চ তদন্ত শেষে আফনান জান্নাত কেয়া শেখ হাসিনা, সায়মা ওয়াজেদসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ১৩ এপ্রিল আদালত শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিকসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
তিনটি মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫৩ জন। একজন ব্যক্তি একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় নামের পুনরাবৃত্তি রয়েছে।