জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও দমে যাননি উল্লাস পাল (Ullas Pal)। কঠোর অধ্যবসায় আর মেধার জোরে ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে (Administration Cadre) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি।
শৈশবের সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে স্বপ্নপূরণ
শরীয়তপুর (Shariatpur) জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলা (Vedarganj Upazila)র কার্তিকপুর গ্রামে (Kartikpur) জন্ম নেওয়া উল্লাসের শৈশব ছিল সংগ্রামে ভরা। দুই হাত ও পা বাঁকা থাকায় ছোটবেলা থেকেই চলাফেরায় ছিল সীমাহীন কষ্ট। বাবা-মায়ের সহযোগিতায় চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে আংশিক উন্নতি হলেও হাটা-চলা স্বাভাবিক হয়নি। তবুও পিছু হটেননি।
শিক্ষাজীবনে নজরকাড়া সাফল্য
১৯৯৯ সালে কার্তিকপুর পালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শুরু করেন। বর্ষায় কাদা-মাটিতে বাবার হাতে ভর করে স্কুলে যেতেন। ২০১০ সালে কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ প্লাস পেয়ে এসএসসি এবং ২০১২ সালে ঢাকা নর্দান কলেজ (Dhaka Northern College) থেকে এইচএসসিতে একই ফলাফল অর্জন করেন।
ঢাকা কলেজে পড়ার ইচ্ছে থাকলেও সুযোগ না পেয়ে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Dhaka) ম্যানেজমেন্ট বিভাগে। সেখান থেকেই বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেন।
বিসিএস যাত্রা ও প্রশাসন ক্যাডারে সাফল্য
উল্লাস প্রথম মৌখিক পরীক্ষা দেন ৪০তম বিসিএসে। এরপর ৪১তম বিসিএসে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে যোগ দেন নড়িয়া সরকারি কলেজে (Naria Government College)। কিন্তু মূল লক্ষ্য ছিল প্রশাসন ক্যাডার। ৪৪তম বিসিএসে অবশেষে সেই স্বপ্ন পূর্ণ হয়।
উল্লাসের অনুভূতি ও বার্তা
উল্লাস বলেন, “রেজাল্ট দেওয়ার দিন প্রশাসন ক্যাডারে রেজিস্ট্রেশন নাম্বার মিলে যাওয়ার পর আনন্দে চোখে জল এসে গিয়েছিল। অনেকে ঠাট্টা করেছে, আবার অনেকেই ভালোবাসা দিয়েছে। আমি লক্ষ্য ঠিক রেখে এগিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “সরকার যেখানে দায়িত্ব দেবে, আমি সেখানে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে চাই। প্রশাসন ক্যাডার একটি জনকল্যাণমুখী পদ। আমি সব সময় মানুষের পাশে থাকতে চাই।”
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উদ্দেশে উল্লাস বলেন, “সমাজ চাইলে প্রতিবন্ধীদের জন্য সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে পারে। তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব।”
পরিবারের গর্ব ও শিক্ষকদের মন্তব্য
মা আন্না রানী পাল বলেন, “ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই কষ্ট করে বড় হয়েছে। আজ সে প্রশাসন ক্যাডারে—আমরা গর্বিত।”
বাবা উত্তম কুমার পাল বলেন, “ওর চেষ্টা আর মনোবলই আজকের সাফল্যের মূল।”
প্রতিবেশী রূপক পাল বলেন, “উল্লাস দেখিয়ে দিয়েছে—প্রতিবন্ধী মানেই দুর্বল নয়।”
কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, “ওর মতো মেধাবী ও সৎ ছাত্র খুব কম দেখি।”