প্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ আলম (Shahed Alam) সম্প্রতি তার ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ২০২৫ সালের জুলাই মাসের আন্দোলনের পেছনের অজানা ইতিহাস তুলে ধরেছেন। এই স্ট্যাটাসে তিনি মূলত হাসনাত (Hasnat) নামের একজন আন্দোলনের অন্যতম নেতার সাথে মধ্যরাতের কথোপকথনের উল্লেখ করেন, যা ঘটেছিল ৩ জুলাই নিউইয়র্ক সময় ভোর ৩টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টা)।
এক দফার ঘোষণার আগমুহূর্তে
তিনি বলেন, সে সময় হাসনাত শহীদ মিনার (Shahid Minar)-এ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। শাহেদ আলম তখন সরাসরি হাসনাতকে প্রশ্ন করেন, “সব তো শেষ হয়ে যাচ্ছে, এক দফার ঘোষণা দিচ্ছ না কেন?” জবাবে হাসনাত বলেন, “ভাই, জিতে ফিরবো বা জিতে ফিরবো! বিকল্প কোন রাস্তা নেই! ১০০ ভাগ আস্থা আছে তোমাদের উপর।”
আন্দোলনের চূড়ান্ত ঘোষণা
এরপরই সন্ধ্যায় আসে বহুল আলোচিত ‘এক দফার’ ঘোষণা। শাহেদ উল্লেখ করেন, এর আগে ১ আগস্ট ‘নয় দফা’ ঘোষণা করা হয়, কিন্তু সেই সময় থেকেই তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, “এক দফা কোথায়?” ছাত্র হত্যার বিচার চাইতে হবে তাদের কাছেই যারা সেই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে—এ যুক্তি তুলে ধরেন তিনি।
শাহেদ আলম দাবি করেন, জুলাই মাসের সবচেয়ে সাহসী ঘোষণা ছিল এই এক দফা। তার ভাষায়, “পরেরটা ছিল—পরশু নয়, কালই লং মার্চ! সত্য জানুক মানুষ। জুলাই এমনি এমনি আসেনি, এমনি এমনি যাবেও না।”
আন্দোলনের ভয়াবহ চাপ ও নির্যাতন
তিনি আরও জানান, আন্দোলনের সমন্বয়করা যখন ডিবি অফিস (DB Office)-এ ইস্তফা দেন, তখনই বোঝা যায়, তারা মুক্ত হলেও আন্দোলনকারীদের মুক্তি নেই। পরিবার-পরিজন ছিল হত্যার ঝুঁকিতে। সেই সময় ‘সার্জিসের আঙুল বাকা ও পা আগে-পিছে করার ছবি’—এই ছবিগুলোর মাধ্যমে আন্দোলনকারীরা ইঙ্গিত দেয়, “তাদেরকে অস্ত্রের মুখে আন্দোলন প্রত্যাহার করানো হয়েছে।”
তখন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (Dhaka University) সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাড থেকে সাক্ষরবিহীন বিবৃতি প্রকাশ করা হয়—“আন্দোলনের ইতি টানছি না, অস্ত্রের মুখে আন্দোলন থামানো মানি না।”
গণমাধ্যমের ভূমিকায় তাসনিম খলিল ও সায়ের
তাসনিম খলিল (Tasneem Khalil) ও সায়েরের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন শাহেদ, যাদের সহায়তায় ‘মাসুদ-মাহিন-রিফাত’ এর ছবি আসে—তাদের হাতে উঁচু করে রাখা ছবি আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠে।
গেরিলা কৌশলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া
সমন্বয়করা ডিবি অফিসের বাইরে গেরিলা কৌশলে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। শাহেদের বিশ্বাস, তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই সময়েও লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বাইরে তখন বিএনপি (BNP), জামায়াত ইসলামি (Jamaat-e-Islami) ও বাম দলগুলোর একযোগে রাজনৈতিক তৎপরতা চলছিল। গণ অধিকার পরিষদ (Gono Odhikar Parishad)-এর রাশেদ (Rashed) ও ফারুক (Faruk) বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে আন্দোলনের বার্তা মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে দিচ্ছিলেন।
শেষে শাহেদ আলম বলেন, “জুলাইয়ের কত অজানা ইতিহাস! কার অবদান কোথায়, কে অস্বীকার করে! আমি সাধারণত ইনবক্স স্ক্রিনশট প্রকাশ করি না, এথিকসের দায়বদ্ধতা থেকে। তবে, জুলাইয়ের কারণে করলাম। হাসনাত, ক্ষমা করে দিস ভাই!”