শরীরে ভিটামিনের ঘাটতির ৮টি স্পষ্ট লক্ষণ ও করণীয়

শরীর যা বলে—ভিটামিন ঘাটতির লক্ষণ

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শরীরচর্চা করলেও অনেক সময় শরীরে এক ধরনের অস্বস্তি অনুভূত হয়। ক্লান্তি, চুল পড়া, ত্বক শুষ্ক হওয়া কিংবা মাংসপেশির ব্যথার মতো লক্ষণগুলো হতে পারে ভিটামিন ঘাটতির স্পষ্ট বার্তা। বিশ্বজুড়ে প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষ ভিটামিনের অভাবে ভুগছেন, অথচ অনেকেই এগুলিকে সাধারণ সমস্যা মনে করে উপেক্ষা করেন।


ভিটামিন ঘাটতি কী?

ভিটামিন ঘাটতি সাধারণত দুই ধরনের হয়:

  • **প্রাইমারি ডেফিসিয়েন্সি খাদ্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, ভিটামিন সি-এর ঘাটতিতে স্কার্ভি রোগ হয়।
  • সেকেন্ডারি ডেফিসিয়েন্সি: যখন শরীর যথাযথভাবে পুষ্টি শোষণ করতে ব্যর্থ হয়। উদাহরণ: সেলিয়াক ডিজিজ।

ভিটামিন ঘাটতির ৮টি অপ্রত্যাশিত লক্ষণ

১. অবিরাম ক্লান্তি

ঘুম ঠিকঠাক হলেও সারাদিন ঝিমুনি? হতে পারে ভিটামিন ডি, বি-১২, আয়রন বা ফোলেট-এর ঘাটতি।

সমাধান: সূর্যের আলো, ডিম, মাছ, সবুজ শাকসবজি খাওয়া।

২. মাংসপেশিতে দুর্বলতা বা ব্যথা

হঠাৎ হাঁটু বা পায়ে ব্যথা বা দুর্বলতা হতে পারে ভিটামিন ডি, ই, ম্যাগনেসিয়াম বা বি ভিটামিন-এর ঘাটতিতে।

সমাধান: বাদাম, ডার্ক চকলেট, দুধ ও ফোর্টিফায়েড খাবার।

৩. চুল পড়া বা পাতলা হয়ে যাওয়া

দিনে ১০০টির বেশি চুল পড়া হলে সতর্ক হোন। বায়োটিন, জিঙ্ক, ভিটামিন বি-২ বা ফোলেট-এর অভাব এর পেছনে থাকতে পারে।

সমাধান: ডিমের কুসুম, মসুর ডাল।

৪. শুষ্ক ত্বক ও ড্যানড্রাফ

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেও ত্বক শুষ্ক থাকলে, ভিটামিন এ, ই, সি, ওমেগা-৩ বা কলাজেনের ঘাটতি হতে পারে।

সমাধান: গাজর, মিষ্টিকুমড়া ও ফ্যাটি ফিশ।

৫. ক্ষত শুকাতে দেরি বা ঘন ঘন অসুস্থতা

ছোট আঘাত সারতে অনেক সময় লাগলে তা দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার লক্ষণ। এর কারণ হতে পারে ভিটামিন সি, ই, কে অথবা জিঙ্ক-এর ঘাটতি।

সমাধান: লেবু, বাদাম, পালং শাক ও সামুদ্রিক খাবার।

৬. মুড সুইং বা অবসাদ

মনের অকারণ খারাপ লাগা, উদ্বেগ ইত্যাদি ভিটামিন ডি বা বি-৬ এর ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে।

সমাধান: সামুদ্রিক মাছ, সূর্যমুখী বীজ, কলা ও রোদে কিছুক্ষণ সময় কাটানো।

৭. দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া

রাতে দেখতে সমস্যা বা ঝাপসা দৃষ্টিশক্তি হতে পারে ভিটামিন এ বা ই-এর ঘাটতির কারণে।

সমাধান: গাজর, মিষ্টি আলু ও কাঠবাদাম।

৮. হাত-পায়ে ঝিঁঝি বা অবশ ভাব

হঠাৎ করে হাতে-পায়ে সূচ ফোটার মতো অনুভূতি হতে পারে স্নায়ুর ক্ষতির ইঙ্গিত। এর পেছনে থাকতে পারে ভিটামিন বি-১২, ম্যাগনেসিয়াম বা ক্যালসিয়ামের অভাব।

সমাধান: ডিম, দুধ, সবুজ শাক ও বীজজাতীয় খাবার।


করণীয়

এইসব লক্ষণ দেখলে নিজের খাদ্যাভ্যাসে নজর দিন। প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করে তাজা ফলমূল, শাকসবজি, প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণ করুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন। তবে মনে রাখবেন, অতিরিক্ত ভিটামিন এ ও ডি ক্ষতিকর হতে পারে। নিজে নিজে ওষুধ গ্রহণ না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

শরীরের সংকেতকে উপেক্ষা না করে সচেতন থাকাই সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।