গিনেস বুকে রেকর্ডধারীর পর অর্থনৈতিক নেতৃত্বে
বাংলাদেশে বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন আশিক চৌধুরী (Ashiq Chowdhury)। আকাশ থেকে ৪১ হাজার ফিট উচ্চতা থেকে লাফিয়ে পড়ে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখানোর পর এবার তিনি জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন।
নেতৃত্ব পরিবর্তনের পর নতুন দায়িত্ব
৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) পদত্যাগ ও দায়িত্ব হস্তান্তরের পর দেশের ভার নেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস (Dr. Muhammad Yunus)। এক মাসের মাথায় তিনি সিঙ্গাপুর (Singapore) থেকে আশিক চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) (Bangladesh Investment Development Authority – BIDA)–এর নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেন।
সন্দেহের অবসান, অভাবনীয় সাফল্য
প্রথমদিকে তাঁর দায়িত্ব পালনের দক্ষতা নিয়ে কিছুটা সংশয় থাকলেও মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই সেই সংশয় দূর করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেন আশিক। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে তার উদ্যোগের ফলে একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে, অন্যদিকে নাসা (NASA), স্টারলিঙ্ক (Starlink)সহ বিশ্বসেরা প্রযুক্তি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বাংলাদেশের মাটিতে একত্রিত করেছেন।
শিক্ষা ও পেশাগত জীবন
চাঁদপুরে জন্ম নিলেও আশিক চৌধুরীর শৈশব কেটেছে যশোরে (Jashore)। শিক্ষা জীবন শুরু করেন সিলেট ক্যাডেট কলেজে (Sylhet Cadet College) এবং পরে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজ (Dhaka Residential Model College) থেকে। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Dhaka) ব্যবসা প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) (Institute of Business Administration – IBA)।
স্নাতক সম্পন্ন করে চলে যান যুক্তরাজ্যে, যেখানে লন্ডন বিজনেস স্কুল (London Business School) থেকে ফাইনান্সে মাস্টার্স করেন।
পেশাগত অভিজ্ঞতা
আশিক পেশাগত জীবন শুরু করেন ২০০৭ সালে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো (British American Tobacco)–তে। পরবর্তীতে কাজ করেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে (Standard Chartered Bank), যেখানে ছিলেন ল্যান্ডিং স্ট্র্যাটেজি ও ফিনান্সিয়াল প্ল্যানিং ম্যানেজার।
তিনি ‘দ্য বেঞ্চ’ নামক দেশের প্রথম স্পোর্টস বারে ছিলেন উদ্যোক্তা হিসেবে, এরপর যোগ দেন আমেরিকান এয়ারলাইন্সে (American Airlines) লন্ডন অফিসে, স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্ট পদে। পাশাপাশি ছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস (বিইউপি) (Bangladesh University of Professionals – BUP)–তে ভিজিটিং প্রফেসর এবং গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট (Grameen Telecom Trust)–এর উপদেষ্টা।
পরবর্তীতে যোগ দেন এইচএসবিসি বাংলাদেশ (HSBC Bangladesh)–এ এবং সেখান থেকে সিঙ্গাপুর অফিসে উচ্চ পদে নিযুক্ত হন। সেখান থেকেই তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনেন ডক্টর ইউনুস।
দায়িত্ব গ্রহণের মুহূর্ত
নিজের ফেসবুক (Facebook) পোস্টে আশিক লেখেন, “সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি এক দুপুরে প্রফেসর ইউনুস হঠাৎ ফোন করে বললেন, ‘আশিক, দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পাওয়া গেছে, আসবা নাকি?’ আমি নন্দিনীকে জিজ্ঞেস না করেই রাজি হয়ে গেলাম।”
তিনি আরও যোগ করেন, “৪৯ সেকেন্ডের এক হোয়াটসঅ্যাপ কলে আমরা সিঙ্গাপুরের বিলাসী জীবন ছেড়ে ছুড়ে দেশের পথে রওনা দিলাম বিডার দায়িত্বে। বন্ধুদের ভাষায় আমি এখন বাংলাদেশের চিফ মার্কেটিং অফিসার।”
বিশ্বরেকর্ড ও নতুন অনুপ্রেরণা
আশিক চৌধুরী কেবল একজন প্রশাসক বা অর্থনীতিবিদই নন, তিনি একজন পেশাদার স্কাই ডাইভারও। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪১ হাজার ফিট উচ্চতা থেকে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে লাফ দিয়ে গিনেস রেকর্ড করেন। ব্যানার বা পতাকা নিয়ে এত উচ্চতা থেকে ঝাঁপানো প্রথম ব্যক্তি হিসেবে গিনেস বুকে তাঁর নাম ওঠে।
বাংলাদেশের পতাকাকে আকাশের সর্বোচ্চ উচ্চতায় তুলে ধরার মতোই, তিনি যেন দেশের অর্থনীতিকেও নিয়ে যাচ্ছেন অনন্য উচ্চতায়—এমনটিই এখন দেশের মানুষের প্রত্যাশা।
এক অনুপ্রেরণার নাম আশিক চৌধুরী
গিনেস বুক থেকে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত—আশিক চৌধুরীর যাত্রা যেন এক অনুপ্রেরণার গল্প। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ নির্মাণে তাঁর অবদান কতখানি হবে তা সময়ই বলবে, তবে এখন পর্যন্ত যাত্রা নিঃসন্দেহে দুর্দান্ত।