কর্মসংস্থানে জোর দিয়ে জেন-জিকে টার্গেট করলো বিএনপি, ১৮ মাসে ১ কোটি চাকরির পরিকল্পনা

বিশাল কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি বিএনপির

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার গঠনের সুযোগ পেলে প্রথম ১৮ মাসেই বিএনপি (BNP) ১ কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছে দলটি। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA) আয়োজিত বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নিয়ে বিএনপি এই পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে।

জেনারেশন জেডকে টার্গেট

বিএনপি বলছে, কর্মসংস্থানের জন্য সবচেয়ে বড় টার্গেট হলো বর্তমান তরুণ প্রজন্ম, অর্থাৎ জেন-জি (Gen-Z)। তারা দেশের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের অংশ। দলটি জানায়, আইটি, কৃষি, তৈরি পোশাক, পর্যটন, প্রবাসী ও বিদেশে কর্মসংস্থানসহ একাধিক খাতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।

‘জবলেস গ্রোথ’-এর বিপরীতে মানুষের জন্য প্রবৃদ্ধি

বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, ফ্যাসিস্ট শাসনের সময় যেসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে তা “জবলেস গ্রোথ” তৈরি করেছে, যার কোনো বাস্তব সুফল জনগণ পায়নি। বিএনপি বিশ্বাস করে, প্রবৃদ্ধি হতে হবে কর্মসংস্থানকেন্দ্রিক এবং সাধারণ জনগণকে সেই সুফল পেতে হবে। এই লক্ষ্যেই তারা বিনিয়োগভিত্তিক এক নতুন অর্থনৈতিক মডেল বাস্তবায়ন করতে চায়।

আত্মকর্মসংস্থান ও দক্ষতা উন্নয়নে জোর

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী (Amir Khasru Mahmud Chowdhury) জানান, তরুণ প্রজন্মকে কর্মক্ষম করে তুলতে না পারলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “আমাদের জেন-জি হলো বড় টার্গেট। তাদের জন্য সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি কর্মসংস্থান তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে আইটি খাতে বিশাল কর্মসংস্থানের প্রত্যাশা করছি। বিদেশেও কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।”

বেসরকারি খাতের প্রসারে বিএনপির অগ্রাধিকার

আমির খসরু মনে করেন, বিএনপির আমলেই বেসরকারি খাত প্রসার পেয়েছিল এবং সেটিই ছিল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি। এবারও দেশীয় ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে বড় বিনিয়োগ আনতে চায় বিএনপি। সেই লক্ষ্যেই তারা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও লাইসেন্স সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সহজীকরণে কাজ করবে।

বিনিয়োগ বান্ধব নীতির প্রতিশ্রুতি

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও বিএনআরসি (BNRC)-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইসরাফিল খসরু (Israfill Khasru) বলেন, অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগই একমাত্র পথ। তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের আমলে অর্থনীতি চালাতে বিপুল ঋণ ও মুদ্রা ছাপানো হয়েছে। কিন্তু আমরা বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে চাই।”

বিদেশি বিনিয়োগে আশাবাদ

বিএনপি মনে করে, ইপিজেড (EPZ), গার্মেন্টস, ও অন্যান্য খাতে যে সকল গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংস্কার হয়েছে, তা তাদের সময়েই হয়েছে। এবার তারা আরও সহজ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানের পথ খুলে দিতে চায়।

ইসরাফিল খসরু বলেন, “আমাদের জেনারেশনের প্রায় ২৮ শতাংশ মানুষ ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সের মধ্যে। এই ৪ কোটি ৬০ লাখ তরুণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হলে বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় নেই।”

ভাষাগত দক্ষতা ও নতুন খাত সংযুক্তির উদ্যোগ

বিএনপির নেতারা বলেন, নতুন খাত যেমন উৎপাদন, সেবা, গার্মেন্টসের পাশাপাশি আইটি এবং পর্যটনকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে। ভাষাগত দক্ষতা বাড়ানো গেলে বিদেশে কর্মসংস্থানের আরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।

সব মিলিয়ে বিএনপির লক্ষ্য হলো- কর্মসংস্থানের উপযোগী একটি অর্থনৈতিক পরিবেশ তৈরি করা এবং জেন-জিকে সেই কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা। নির্বাচনে বিজয়ী হলে তারা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দ্রুত অগ্রসর হবে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়।