শুল্ক যুদ্ধ ও মার্কিন অর্থনৈতিক ক্ষতি
বিশ্বব্যাপী শুল্ক আরোপের জেরে যুক্তরাষ্ট্র (United-States) ব্যাপক অর্থনৈতিক চাপে পড়েছে। শেয়ারবাজারে দরপতন এবং কোটি কোটি ডলারের ক্ষতির পরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald-Trump) এ নিয়ে চিন্তিত নন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। সরকারি ঋণপত্রের দ্রুত দরপতনও তাকে বিচলিত করেনি, যদিও এটি আন্তর্জাতিকভাবে ডলারের আধিপত্য এবং মার্কিন অর্থনীতির ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিতে পারে।
চীনের সাথে উত্তেজনা ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ঝুঁকি
৯০ দিনের জন্য কিছু দেশের জন্য শুল্ক স্থগিত করলেও, ট্রাম্প চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (Xi-Jinping) এর সঙ্গে এমন এক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন যা বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতিকে আলাদা করে দিতে পারে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলায় বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে।
এই প্রতিযোগিতায় ট্রাম্প তার দুর্বলতা প্রকাশ করেছেন। যদিও তিনি ওয়াল স্ট্রিট এবং প্রযুক্তি খাতে প্রভাবশালী সমর্থকদের উপেক্ষা করতে পারেন না। এলন মাস্ক (Elon-Musk) এবং হেজ ফান্ড ব্যবস্থাপক উইলিয়াম এ. অ্যাকম্যানসহ অনেকেই ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিরোধিতা করেছেন।
চীনের জনগণের দেশপ্রেম এবং জাতীয়তাবাদ
চীনে এই পরিস্থিতিকে ভিন্নভাবে দেখা হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে কেউ শুল্কের কারণে ভোগান্তির কথা বললে, জাতীয়তাবাদী মন্তব্যকারীরা তাদের আক্রমণ করেছেন এবং দেশপ্রেমহীন বলে চিহ্নিত করেছেন। এই পরিস্থিতি চীনা জনগণের ঐক্য এবং সংগ্রামের মনোভাবের প্রতিফলন।
চীনা সামাজিক মাধ্যমে বেইজিং (Beijing)য়ে জাতীয় স্বার্থে দুর্ভোগ সহ্য করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। অনেকে মাও সেতুং (Mao-Zedong) এর পুরনো ভিডিও শেয়ার করেছেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন, “আমরা ততদিন লড়াই করব, যতদিন না সম্পূর্ণভাবে জয়ী হই।”
অনেকে আবার ‘গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড’এর উদাহরণ টেনে চীনাদের আত্মত্যাগের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। যদিও এই উদ্যোগ লাখ লাখ প্রাণহানির কারণ হয়েছিল, তবুও তখনকার মাওয়ের কৌশল ছিল কঠোর মিতব্যয় এবং সংগ্রাম।
শি জিনপিংয়ের নেতৃত্ব ও জনগণের সাথে সম্পর্ক
শি জিনপিংকে অনেকেই মাও সেতুংয়ের উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করেন। তার জীবনে নানা প্রতিকূলতা ও রাজনৈতিক দুর্দশা রয়েছে—শৈশবে বাবার কারাবরণ এবং নিজেকে লোয়েস মালভূমিতে কৃষক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হওয়া ইত্যাদি।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শি তরুণদের ‘দুর্ভোগ সহ্য করার’ আহ্বান জানিয়ে থাকেন। সেখানে ‘দুর্ভোগ’ শব্দটি ৩৭ বার উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্প্রতি ট্রাম্পের সঙ্গে চলমান শুল্কযুদ্ধ প্রসঙ্গে শি বলেন, “চীনের উন্নয়ন আত্মনির্ভরতা ও কঠোর পরিশ্রমের উপর ভিত্তি করে; কখনও অন্যের দানে নয়, কখনও অন্যায্য চাপেরও ভয় নেই।”
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ও দেশপ্রেম
ওয়েইবো (Weibo) প্ল্যাটফর্মে এক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “কর্তৃত্ববাদের কাছে আত্মসমর্পণ চীনের পক্ষে কখনও বিকল্প ছিল না। কোরিয়ান যুদ্ধের সময় আমরা আমেরিকানদের প্রতিহত করতে পেরেছিলাম, শুল্ক যুদ্ধেও পারব।”
এই মন্তব্যটি ৩ হাজারের বেশি লাইক পেয়েছে, যা স্পষ্ট করে দেয় যে, চীনা জনগণের দেশপ্রেম ও জাতীয়তার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের প্রতিযোগিতা করা সত্যিই কঠিন।
সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস