নির্বাচনে নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজন হতে পারে: শামসুজ্জামান দুদু

বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনা প্রশ্নবিদ্ধ, দাবি শামসুজ্জামান দুদু (Shamsuzzaman Dudu)

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু (Shamsuzzaman Dudu) কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আবারো জরুরি হয়ে উঠতে পারে। তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে কি না, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।”

দুদু আরও বলেন, বর্তমান সরকার প্রশাসনিকভাবে এবং নৈতিকভাবে দেশের বিভিন্ন খাতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, “আওয়ামী লীগ (Awami League) মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং গণতন্ত্র সংকটের মধ্যে ফেলেছে।”

শিক্ষাখাতে অবনতি ও শিল্প খাতে অসন্তোষ

তিনি জানান, শিক্ষাখাতে এখনও স্বাভাবিকতা ফিরে আসেনি। আগে ছাত্রলীগ হলে দখলবাজি করত, এখন অন্যরা করছে—যারা নিজেদের সততার ধারক হিসেবে তুলে ধরছে। শিল্প খাতে ঈদ উপলক্ষে শ্রমিকদের সময়মতো বেতন-ভাতা দিতে না পারা সরকারের ব্যর্থতার একটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

রাজনৈতিক সংগঠনের ভূমিকা ও নির্বাচন নিয়ে মতামত

তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্যতা কেবল রাজনৈতিক দলেরই থাকে, দারোয়ানের নয়। বর্তমান সরকার রাজনীতিবিদ নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপি (BNP) জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে অতীতে দেশ পরিচালনা করেছে, অথচ বর্তমান সরকার জনগণের সরকার নয় বলেও দাবি করেন তিনি।

সংস্কার বনাম নতুন সংবিধান: দ্বিমত

দুদু বলেন, সংবিধান সংস্কার করা যেতে পারে, কিন্তু নতুন সংবিধান করতে হলে নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ গঠন করতে হবে। তার মতে, ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ বা গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি একটি ‘পাগলামি’ ছাড়া কিছুই নয়। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতাকে অস্বীকারকারীরাই নতুন করে স্বাধীনতার কথা বলেন।

ছাত্র রাজনীতি ও নির্বাচন ইঞ্জিনিয়ারিং

বর্তমান সরকার শিক্ষার্থীদের দিয়ে নতুন দল গঠন করিয়েছে এবং তাদের প্রতিনিধিদের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে—এমন অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, এ অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন প্রসঙ্গে সময়সূচি পরিবর্তন করে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এনসিপি ও জামায়াত প্রসঙ্গ

এনসিপি (NCP) এবং জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami) নির্বাচনের আগে সংস্কারের দাবি করলেও দুদু বলেন, যাদের নির্বাচন থেকে লাভ হবে না, তারাই নির্বাচন এড়াতে চায়। তিনি মনে করেন, জনগণের এখন প্রধান দাবি হলো নির্বাচন ও গণতন্ত্র।

চাঁদাবাজি ও সংগঠনের অবস্থান

দুদু বলেন, যারা চাঁদাবাজি করে, তারা প্রকৃত অর্থে ছাত্রদল (Chhatra Dal) বা বিএনপির কেউ নয়। দলের নির্দেশনা অমান্যকারীকে দলের অংশ হিসেবে ধরা যায় না। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে তিনি মত দেন।

জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব

দুদু জানান, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সময় জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও বর্তমানে ফ্যাসিবাদের দোসর হলে কোনো দলকেই বন্ধু বলা যায় না। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক সংগঠন, যেখানে জামায়াত অতীতে বারবার ভুল করেছে।

নির্বাচন ও সরকার নিয়ে সমাপ্ত মন্তব্য

সাক্ষাৎকারের শেষ দিকে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা না হলেও তাদের বাতিল করা জরুরি।” বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন করার ওপর তিনি জোর দেন।