জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ শাহিনূরের মর্মান্তিক গল্প
ঢাকা (Dhaka) : জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে যাত্রাবাড়ী (Jatrabari), শনির আখড়া (Shonir Akhra), ডেমরা (Demra), কদমতলী (Kadamtole) ও রায়েরবাগ (Rayerbag) এলাকায় পুলিশ আন্দোলনকারীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে অনেক সাধারণ পথচারীও প্রাণ হারান। তেমনই একজন শহীদ ছিলেন কাজলার মাছ ব্যবসায়ী শাহিনূর বেগম (Shahinur Begum)।
গুলিবিদ্ধ শাহিনূরের চিকিৎসায় চরম অবহেলা
২২ জুলাই সকালে ফজরের নামাজ শেষে হাঁটতে বের হন শাহিনূর। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রায় এক ঘণ্টা রাস্তায় পড়ে থাকেন। এরপর স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে শনির আখড়ার একটি হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (Dhaka Medical College Hospital)-এ নিয়ে যাওয়া হয়।
তবে সেখানে চিকিৎসকদের আচরণ ছিল অমানবিক। শাহিনূরের বড় মেয়ে হাফেজা কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, “হাসপাতালে মায়েরে বারান্দায় ফালাইয়া রাখছিল, চিকিৎসা করে নাই। ডাক্তাররা বলতেছে— ‘বুড়া মানুষ গুলি খাইছে, মরে গেলে সমস্যা নাই।’”
দেরিতে মেলে আইসিইউ, আর ফিরলেন না শাহিনূর
হাফেজা আরও জানান, পরে চিকিৎসা শুরু হলেও আইসিইউ’র প্রয়োজন হয়। তিন দিন পর আইসিইউ মেলে। এক মাস ৯ দিন হাসপাতালে ছিলেন শাহিনূর, কিন্তু তার মুখ থেকে কোনো কথা শোনা যায়নি। হাফেজা বলেন, “যদি প্রথম দিনেই আইসিইউ পেতাম, হয়তো একটা কথা শুনতাম মায়ের মুখে।”
সহানুভূতির মানুষ, সহানুভূতির অভাব
শাহিনূরের মৃত্যুর পর জানা যায়, তার সাথে থাকা টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার কেউ নিয়ে যায়। শুধু মোবাইলটি রক্ষা পায়। এক অচেনা ভ্যানচালক তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। হাফেজা বলেন, “মনে হয় আল্লাহ ওই মানুষটারে ফেরেশতা বানায়া পাঠাইছিল মায়ের জন্য।”
সহানুভূতি ও আর্থিক সহায়তা
মেঘনা (Meghna) উপজেলা বিএনপি ও জামায়াত (Jamaat)সহ বিভিন্ন সংগঠন খোঁজ নিয়েছে শহীদ পরিবারটির। কুমিল্লা জেলা প্রশাসন (Comilla District Administration) ২ লাখ টাকা এবং জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন ৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে।
‘অনুদান দিয়ে কি মাকে ফেরত পাবে?’
শাহিনূরের মেজো মেয়ে জেসমিন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “যত অনুদানই দেওয়া হোক, আমার মা কি আর ফিরে আসবে? মা আমাদের অনেক কষ্ট করে বড় করছেন। আমি মায়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”