জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংশোধন হচ্ছে ভোটার তালিকা আইন

নির্বাচন বিলম্বে বাড়বে তরুণ ভোটারের সংখ্যা

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে হালনাগাদ ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়া নতুন ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) (Election Commission) ভোটার তালিকা আইন ও বিধিমালায় সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। সংশোধনী প্রস্তাব বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং শিগগিরই এটি আইন মন্ত্রণালয়ে (Law Ministry) উপস্থাপন করা হবে।

হালনাগাদ তালিকায় ৪৩ লাখের বেশি নতুন ভোটার

বর্তমানে হালনাগাদ কার্যক্রমে অন্তত ৪৩ লাখ ২৭ হাজার নতুন ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই তরুণ। নির্বাচন যত বিলম্ব হবে, নতুন তরুণ ভোটারের সংখ্যা তত বাড়বে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের যেকোনো সময় খসড়া ও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করতে পারার বিধান যুক্ত করা হচ্ছে। ফলে ২ জানুয়ারি ও ২ মার্চ নির্ধারিত তারিখ ছাড়াও ইসি যেকোনো সময় তালিকা প্রকাশে সক্ষম হবে।

সরকার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছে

আইন মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, ইসির পক্ষ থেকে প্রস্তাব এলে তা বিবেচনায় নেবে সরকার। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল (Dr. Asif Nazrul) বলেন, “তরুণ সমাজ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাই তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি করা উচিত।”

ডিসেম্বরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি

ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus), অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, বলেছেন সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬-এর মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে। অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের মধ্যেই ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ভোটার হালনাগাদ ও নতুন বয়স সীমা

৯ এপ্রিল পর্যন্ত হালনাগাদ কার্যক্রমে ৫৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮৬৬ জন নতুন ভোটার নিবন্ধিত হয়েছেন, যা মোট ভোটারের প্রায় ৫ শতাংশ। এর মধ্যে ৪৩ লাখ ২৭ হাজার বাদ পড়া ভোটারদের জন্ম ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে, অর্থাৎ তারা ভোটার হওয়ার জন্য উপযুক্ত। এছাড়া আগামী বছরের ১ জানুয়ারির মধ্যে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তারাও তালিকাভুক্ত হচ্ছেন।

ইসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ১২ কোটি ৩৭ লাখ ভোটার রয়েছেন। এদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশই তরুণ, যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। হালনাগাদ শেষে তরুণ ভোটারের সংখ্যা আরও বাড়বে।

আইন সংশোধনের খসড়া

ভোটার তালিকা আইনের ধারা-৩(জ) ও ১১(১)-এ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে “জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ” বাদ দিয়ে “কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত তারিখ” যুক্ত করার প্রস্তাব রয়েছে। একইভাবে ২ জানুয়ারি থেকে ২ মার্চ সময়সীমা ছাড়াও কমিশনের বিবেচনায় উপযুক্ত তারিখে তালিকা প্রকাশের সুযোগ রাখতে সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে।

এই সংশোধনী পাশ হলে চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের শুরুর আগে ভোট হলে হালনাগাদে যুক্ত তরুণরাও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।

সংশোধনী প্রক্রিয়ার অগ্রগতি

ইসির আইন সংস্কার সংক্রান্ত কমিটি, যার আহ্বায়ক নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ (Abdur Rahmanel Machud), সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি করেছে। এটি কমিশনের অনুমোদন পেলেই অধ্যাদেশ আকারে আইন মন্ত্রণালয়ে (Law Ministry) পাঠানো হবে।

আখতার আহমেদ (Akhtar Ahmed), নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব, জানান যে চলতি বছরেই হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করতে চাইলে আইন সংশোধন আবশ্যক।