চট্টগ্রাম-১১ আসনে বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ
চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) সংসদীয় আসনকে ঘিরে শুরু হয়েছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৎপরতা। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটিতে একসময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন (তৎকালীন চট্টগ্রাম-৮)। তার আসন ছেড়ে দেওয়ার পর উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন চারবারের সংসদ সদস্য, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বাবা-ছেলের এক আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। একইসঙ্গে এ আসনে মনোনয়ন চাইছেন তার ছেলে ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ধারণা করা হচ্ছে, যদি আমির খসরু চট্টগ্রাম-১০ থেকে মনোনয়ন পান, তবে চট্টগ্রাম-১১ আসন ছেড়ে দেবেন ছেলের জন্য।
চট্টগ্রামে সম্প্রতি আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে আমির খসরুর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তার ছেলে ইসরাফিল খসরু। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, “আমি কখনো ক্ষমতা বা জনপ্রতিনিধিত্ব করার চিন্তা করিনি। দল চাইলে আমি প্রস্তুত।” তিনি বর্তমানে বিএনপির পররাষ্ট্র উপকমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
জামায়াতের প্রার্থীও সক্রিয়
এ আসনে আগেভাগেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির পক্ষ থেকে শফিউল আলম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ৩৭নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলরকে প্রার্থী করা হয়েছে। তিনি বলেন, “২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চসিকের কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। নাগরিকদের নিরাপদ বাসস্থান নিশ্চিত করা এবং কিশোর গ্যাং, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব দূর করাই আমার অগ্রাধিকার।”
আওয়ামী লীগের অবস্থান অনিশ্চিত
২০০৮ সাল থেকে চট্টগ্রাম-১১ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ লতিফ। তিনি বিতর্কিত তিনটি নির্বাচনেও জয়ী হন। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে চলে যান। এরপর ৯ আগস্ট মাদারবাড়ী এলাকা থেকে সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
তার বিরুদ্ধে পরিবারতন্ত্র, বন্দরের বাণিজ্যে প্রভাব বিস্তার, জমি দখল এবং সরকারি সুবিধা কাজে লাগিয়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
আসনের ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব
চট্টগ্রাম-১১ আসনটি গঠিত হয়েছে চসিকের ২৭ থেকে ৩০ এবং ৩৬ থেকে ৪১ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে। এতে রয়েছে পতেঙ্গা, বন্দর, সদরঘাট, ইপিজেড থানা ও ডবলমুরিং থানার একাংশ। এখানে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, দুটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, বিমানবন্দর, নৌবাহিনীর ঘাঁটি, তেল শোধনাগারসহ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্থাপনা রয়েছে।
বিএনপির সংগঠনিক ভিত্তি ও সম্ভাবনা
১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত টানা ১৫ বছর চট্টগ্রাম-১১ আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। দলটির তৃণমূলের মতে, এখনো এই আসনে আমির খসরুর কোনো বিকল্প নেই। তার পৈতৃক নিবাস উত্তর কাট্টলী এলাকায়, যা এখন চট্টগ্রাম-১০ এর অন্তর্ভুক্ত। সে অনুযায়ী, তিনি দুটি আসনেই মনোনয়ন চাইবেন।
বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন, আমির খসরু যেখানেই মনোনয়ন পান, জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।