জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, “এবারের বৈশাখ উদযাপন আমাকে দমবন্ধ করে তুলেছে।” তিনি অভিযোগ করেন, শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন এবং সরকারের হস্তক্ষেপ সংস্কৃতি ও শিল্পের স্বতঃস্ফূর্ততাকে সংকুচিত করেছে।
আনন্দ শোভাযাত্রা নিয়ে শাওনের মত
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার অনলাইনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে শাওন লেখেন, “ছোটবেলার বৈশাখ মানেই ছিল রমনার বটমূল, ছায়ানটের গান, মুখোশ, লাল-সাদা আর উৎসবের জৌলুস। আজ সেই ঝলমলে শহরের পহেলা বৈশাখে যেন সবই থেমে গেছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “চারুকলার শোভাযাত্রার নাম বদলে ‘মঙ্গল’ থেকে ‘আনন্দ’ করা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে, সংস্কৃতির মাঝে হস্তক্ষেপ আমরা চাই না।”
সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার অভাব
শাওন বলেন, “এ বছর শোভাযাত্রার আয়োজন ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। সরকারের হস্তক্ষেপ ছিল স্পষ্ট, যার কারণে প্রতিবছরের স্বতঃস্ফূর্ততা অনুপস্থিত।” তিনি নিজেও এই বৈশাখ উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা টিভি স্ক্রিনে স্বতঃস্ফূর্ত উদযাপন দেখতে না পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
নাটক মঞ্চায়নে বাধা এবং শিল্পীদের নীরবতা
শাওন বলেন, “মহিলা সমিতিতে ‘শেষের কবিতা’ নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু জনতার প্রতিবাদে তা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক শিল্পী সরকারের সঙ্গে যুক্ত হলেও তারা মুখ খুলছেন না। একজন শিল্পী হয়ে অন্য শিল্পীর পাশে দাঁড়াতে না পারা সত্যিই দুঃখজনক।”
ব্যক্তিগতভাবে উৎসব উদযাপন
তিনি জানান, “আমি আমার পরিবার নিয়ে ঘরে বসেই উৎসব উদযাপন করব। পান্তা-ইলিশ নয়, দেশীয় ভর্তা আর মাছ খেতে ভালোবাসি।”
ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদ
শাওন জানান, তার দুই ছেলে বাংলাদেশের ইতিহাস পড়ছে, দেশীয় সংস্কৃতি বুঝতে চেষ্টা করছে। “আমি চাই তারা আমার দেখা বাংলাদেশের মতো এক বাঙালিয়ানা ভবিষ্যতে দেখতে পাক,” বলেন তিনি।
হুমায়ূন আহমেদ থাকলে…
শাওন বলেন, “এই পরিবর্তিত সময়ে যদি হুমায়ূন আহমেদ থাকতেন, তিনি এই সংস্কৃতির অবক্ষয় মেনে নিতে পারতেন না। নাটক বন্ধ করা, গান থামিয়ে দেওয়া, এসব তিনি পছন্দ করতেন না। তিনি ছিলেন বাঙালি সংস্কৃতির একজন গভীর অনুরাগী।”
‘মব সংস্কৃতি’ নিয়ে উদ্বেগ
শাওন লেখেন, “বাংলাদেশে এখন ‘মব সংস্কৃতি’ মাথাচাড়া দিয়েছে, উত্তেজিত জনতা নাটক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ করছে। এটা বন্ধে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।”