পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বিএনপিকে ঘিরে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভারতের কূটনৈতিক মহলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-কে ঘিরে ভাবনায় একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ঘটনাপ্রবাহের পর ভারতের জন্য বিএনপি এখন একমাত্র বাস্তব রাজনৈতিক বিকল্প হিসেবে দেখা দিচ্ছে বলে মনে করছেন দিল্লির রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

অতীতের দ্বিধা ও বর্তমান সম্ভাবনা

দীর্ঘদিন ভারত কেবল আওয়ামী লীগের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। বিপরীতে বিএনপির সঙ্গে ছিল সন্দেহ, বিশেষ করে ২০০১-২০০৬ মেয়াদে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশে আশ্রয়ের অভিযোগে সম্পর্ক জটিল হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় ভারত এখন বিএনপির প্রতি অনেকটাই ‘প্রো-অ্যাকটিভ’ মনোভাব নিচ্ছে।

বিজেপির দৃষ্টিভঙ্গি: নিরাপত্তা ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা অগ্রাধিকার

বিজেপি রাজনীতিক শমীক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে এমন দলকেই ভারত সমর্থন জানাবে।” সে দিক থেকে বিএনপির জামায়াতবিরোধী অবস্থান ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হতে পারে।

বিএনপি-জামায়াত সম্পর্কের অবসান ভারতের জন্য ইতিবাচক বার্তা

ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, বিএনপির জামায়াত থেকে দূরত্ব রক্ষা বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কোন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির মতপার্থক্য এখন অনেক স্পষ্ট।

তারেক রহমানকে ঘিরে সতর্ক দৃষ্টি

বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে থাকা তারেক রহমান-এর জামায়াত নিয়ে অবস্থান ও ভারতের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির ওপরই অনেক কিছু নির্ভর করছে। অতীতে ভারতের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের বক্তব্য নিয়ে তার প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।

নির্বাচন ও ভারতের অবস্থান

ভারত সরকার এখন বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়, তবে কোন দলকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেবে না। প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী নিজে প্রফেসর ইউনূস-এর সঙ্গে ব্যাংককে বৈঠকে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

নিরাপত্তা ইস্যু এখনও প্রধান বাধা

ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক শান্তনু মুখার্জি মনে করেন, আলফা ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ বিএনপির বিরুদ্ধে এখনও দিল্লির কাছে বড় বাধা। তবে তিনি বলেন, “নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এলে বিএনপি আগের রেকর্ড সংশোধন করতে পারে।”

সারসংক্ষেপে ভারতের অবস্থান

  • নির্বাচন-পূর্ব বিএনপির সঙ্গে প্রকাশ্য ঘনিষ্ঠতা নয়
  • নির্বাচনে জয়ী হলে সম্পর্ক পুনর্গঠন সম্ভব
  • জামায়াত থেকে দূরত্ব, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, নিরাপত্তা উদ্বেগ প্রশমনে পদক্ষেপ—এই তিনটি বিষয়ের ওপর ভারতের পরবর্তী কৌশল নির্ভর করবে