শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকারের সময় দেশের বাইরে পাচার হওয়া বিপুল অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এবং অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ছয় মাসের মধ্যে বড় অঙ্কের অর্থ জব্দ করা সম্ভব হতে পারে। তবে বাস্তবতা বলছে, প্রক্রিয়াটি জটিল, সময়সাপেক্ষ এবং বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জে ভরা।
২৮ লাখ কোটি টাকার অর্থ পাচারের হিসাব
অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র অনুসারে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ধারণা দিয়েছেন, এর মধ্যে আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা শুধু কিছু বড় গ্রুপের হাতেই রয়েছে। তিনি চট্টগ্রাম-এর একটি প্রতিষ্ঠানের কথাও উল্লেখ করেন যারা একাই দেড় লাখ কোটি টাকার মতো ব্যাংক ঋণ নিয়েছে।
কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?
বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন বিদেশি ফার্ম, লফার্ম এবং সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। বেশ কিছু দেশে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং আইনগত সহায়তা চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU) বলছে, তারা এখন পর্যন্ত ১২টি দেশে ৭১টি মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (MLAR) পাঠিয়েছে, যার মধ্যে ২৭টির জবাব পাওয়া গেছে।
ফেরত এসেছে কি কিছু?
সাবেক নির্বাহী পরিচালক এ কে এম এহসান জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত পাচার হওয়া কোনো অর্থ ফেরত আসেনি। তবে রিজার্ভ হ্যাকের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে মামলা করে আংশিক অর্থ ফেরত পাওয়া গেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০১২-১৩ সালে সিঙ্গাপুর থেকে প্রায় এক মিলিয়ন ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের মত
আবুল কাসেম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর বলেছেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে হলে আগে তা প্রমাণ করতে হবে। বিদেশে যদি সেই অর্থ বৈধভাবে বিনিয়োগ করা হয়ে থাকে, তাহলে তা ফেরত আনা আরও কঠিন হবে।
মো. নুরুল আমিন, যমুনা ব্যাংকের সাবেক এমডি বলেন, টাকা ফেরত আনতে আইনি প্রক্রিয়া, বিদেশি আদালতের সিদ্ধান্ত এবং আন্তঃদেশীয় সমঝোতা প্রয়োজন।
আইনি কাঠামো ও সতর্কতা
সরকার একটি নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে, যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইনি বিশেষজ্ঞ নিয়োগের সুযোগ থাকবে। তবে টিআইবি-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক আইনি সহায়তা নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ অনেক সময় যেসব প্রতিষ্ঠান পাচারে সহায়তা করে, তারাই আবার তা উদ্ধারের নামেও কাজ করে থাকে।
রাজনীতি ও বাস্তবতা
পিকে হালদার-এর মতো অর্থপাচারকারীরা ভারতের কারাগারে থাকলেও বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এতে রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে।
শেষ কথা
বিশ্লেষকদের মতে, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। তবে এর জন্য দরকার আন্তরিকতা, কার্যকর সমন্বয় এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে সরকার যে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়, তবে বাস্তবায়নের দিকে কড়াভাবে নজর রাখতে হবে।