নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের উত্তাপ। একদিকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী চাইছে ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যেই ভোট, অন্যদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলছে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন হবে। আবহাওয়া, ধর্মীয় উৎসব ও শিক্ষা কার্যক্রমকে সামনে রেখে সময় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপ ও মতবিরোধ।
কেন ডিসেম্বর-জানুয়ারিতেই নির্বাচন দাবি?
বাংলাদেশে নির্বাচন সাধারণত হয় শীতকালে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি সময়টি আবহাওয়াগত দিক থেকে নির্বাচন উপযোগী বলে ধরে নেওয়া হয়। এই সময় প্রচার-প্রচারণা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ভোটারদের অংশগ্রহণে সুবিধা হয়।
বিএনপি-র দাবি, গরমকালে প্রচারণা চালানো ও ভোটারদের অংশগ্রহণ কঠিন হয়ে পড়ে। উপরন্তু এপ্রিল থেকে শুরু হয় শিক্ষা পরীক্ষা, রমজান, ঈদ ও বর্ষা মৌসুম—যা নির্বাচনের পথে বড় বাধা।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন পিছিয়ে গেলে সেটা বাস্তবসম্মত নয়, বরং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।”
সরকার বলছে ডিসেম্বর থেকে জুন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যে কোনো সময় নির্বাচন হতে পারে। তবে এটি নির্ভর করছে রাজনৈতিক সংস্কার, আইনগত প্রস্তুতি ও ঐকমত্যের অগ্রগতির ওপর।
সরকারের আইন উপদেষ্টা জানান, “নির্বাচন পেছানোর কোনো উদ্দেশ্য নেই। ডিসেম্বরে সম্ভব হলে তখনই হবে, না হলে জানুয়ারিতে। তবে কোনোভাবেই জুনের পরে যাবে না।”
জামায়াতের অবস্থান: রমজানের আগেই ভোট
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান জানিয়েছেন, “আগামী বছর ১৭ বা ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে রমজান। তাই তার আগেই নির্বাচন শেষ হওয়া উচিত।” কারণ রমজানের পরে রয়েছে ঈদ, এসএসসি পরীক্ষা ও বর্ষা—সব মিলিয়ে ভোট আয়োজন কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।
গরমকালে ভোট কতটা বাস্তবসম্মত?
বাংলাদেশে এর আগে মাত্র দু’বার গরমকালে ভোট হয়েছে—১৯৮৬ ও ১৯৯৬ সালে। তবে নির্বাচন কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা জেসমিন টুলী বলেন, “গরমে ভোট করানো অসম্ভব নয়, তবে এটি চ্যালেঞ্জিং। স্কুল ফাঁকা পাওয়া, শিক্ষক পাওয়া, আবহাওয়া, উৎসব ও পরীক্ষা—সবকিছু মাথায় রেখে পরিকল্পনা করতে হয়।”
এনসিপির অবস্থান
নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সরকার ঘোষিত ডিসেম্বর থেকে জুন সময়সীমাকে প্রাথমিকভাবে সমর্থন করলেও বলছে, সংস্কার এবং বিচার ছাড়া নির্বাচন হলে তারা অংশ নেবে না।
নির্বাচন নিয়ে ঐকমত্য প্রক্রিয়া ও সময়সংকট
সরকার চায় দুই মাসের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম চূড়ান্ত করে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে। তবে বিএনপির মতে, ঐকমত্যের চূড়ান্ততা অপেক্ষা না করে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করা জরুরি।
আমীর খসরু বলেন, “সব দলের মতামত এক হবে না। গণতন্ত্র মানে মতবিরোধ। সুতরাং সংস্কার নিয়ে বেশি সময় নেওয়ার মানে হচ্ছে নির্বাচন বিলম্বিত করা।”
উপসংহার
এখন প্রশ্ন থেকে যায়—রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি মেনে ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে, নাকি সময় গড়াতে গড়াতে তা গরমকাল বা রমজান পেরিয়ে জুনে গিয়ে ঠেকবে? রাজনৈতিক সমঝোতা, আইনগত প্রস্তুতি ও কমিশনের বাস্তবতায়ই এর উত্তর নির্ভর করছে।