‘হানি ট্র্যাপ’ বা ভালোবাসার ফাঁদ—বাংলাদেশে এই শব্দটি আবারও আলোচনার কেন্দ্রে। সম্প্রতি মডেল মেঘনা আলম-এর গ্রেপ্তারের পর তার প্রেমঘটিত প্রতারণার মাধ্যমে কূটনীতিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। তদন্তে উঠে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য—তার ‘ফাঁদে’ পড়েছেন অন্তত দুই বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও একাধিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী।
হানি ট্র্যাপে বিদেশি রাষ্ট্রদূত
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)-এর তথ্যমতে, ইংরেজিতে দক্ষ মেঘনা আলম সহজেই বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এক উন্নত রাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং সার্কভুক্ত আরেক দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। অভিযোগ আছে, এই কূটনীতিকদের কাছ থেকে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেন। এরা বাংলাদেশ ছেড়ে গেলেও পরে আবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হয়ে ফিরে এসেছেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মৌখিকভাবে সব জানিয়েছে।
প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ
মেঘনা ও তার সহযোগী দেওয়ান সমির, যিনি সানজানা ম্যানপাওয়ারের মালিক, বেশ কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এবং কূটনীতিককে টার্গেট করে প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় এবং পরে ধানমন্ডি থানায় মামলা হয়।
সূত্র জানায়, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসেফ আলদুহাইন-কে প্রেমের ফাঁদে ফেলে পাঁচ মিলিয়ন ডলার দাবি করা হয়। এই ঘটনা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
রাজনীতিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক
গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, মেঘনার ঘনিষ্ঠতা ছিল সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন, এবং কেন্দ্রীয় নেতা মোজাম্মেল হোসেন চৌধুরী মায়া-র ছেলে রাশেদুল হোসেন চৌধুরী-র সঙ্গে। এসব সম্পর্ক ব্যবহার করে তিনি রাজনৈতিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানেও ঢুকে পড়তেন।
বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অপচেষ্টা
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সংস্থা বলছে, পার্শ্ববর্তী একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এই চক্রকে ব্যবহার করে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলতে এবং আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল করতে চায়।
গ্রেপ্তার ও তদন্ত
মেঘনা আলম বর্তমানে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কারাগারে আছেন। দেওয়ান সমির বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থা এখন খতিয়ে দেখছে—মেঘনার ফাঁদে আসলে কে কে পড়েছেন, তাদের মাধ্যমে কী কী তথ্য বা সম্পদ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।