আরেকটি স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা আসার সকল পথ রুদ্ধ করার অঙ্গীকার এনসিপির

বাংলাদেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা আসবে না—এ প্রতিজ্ঞা নিয়ে নতুন রাজনৈতিক কাঠামো গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizen Party)–এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (Nahid Islam)।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে জাতীয় সংসদ (National Parliament)-এর এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের (National Consensus Commission) সঙ্গে এনসিপির সংলাপে প্রারম্ভিক বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

“ফ্যাসিবাদের সব পথ বন্ধ করব”—নাহিদ

নাহিদ ইসলাম বলেন, “এইবার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে আমাদের জাতির সামনে, জাতীয় ঐক্যমত প্রয়োজন, জুলাই সনদ প্রয়োজন। আমাদের সকলকে সেই অঙ্গীকার রাখতে হবে—আরেকটি স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা আসবে না, আমরা সেই সব রাস্তা বন্ধ করে সামনে এগোবো।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা শুধু ক্ষমতা পরিবর্তন চাই না, আমরা চাই রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক ও গুণগত পরিবর্তন। সংবিধান, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা—সবখানেই আমাদের সংস্কার দরকার। এনসিপি সেই মৌলিক সংস্কারেই বিশ্বাস করে।”

জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল শাসন কাঠামো ভাঙার ডাক

নাহিদ ইসলাম স্মরণ করিয়ে দেন, ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল শুধুমাত্র ব্যক্তি বা দলের পরিবর্তনের নয়, বরং রাষ্ট্রের মৌলিক রূপান্তরের আহ্বান। তার ভাষায়, “এই অভ্যুত্থান নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার চেতনা নিয়ে এসেছে।”

তিনি বলেন, “আমরা ৯০’র গণঅভ্যুত্থানের কথা জানি, কিন্তু সেসব আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয়নি বলেই দেশে ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা চাই না এই অভ্যুত্থানও ব্যর্থ হোক।”

এনসিপির সংস্কার প্রস্তাব

নাহিদ ইসলাম জানান, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোতে এনসিপি অধিকাংশ ক্ষেত্রে একমত। তবে কিছু বিষয়ে ভিন্ন মত থাকায় তারা নিজেদের পরিপূর্ণ সুপারিশ জমা দিয়েছে।

তিনি বলেন, “আমরা যেসব সংস্কারের কথা বলছি, তা শুধুই কাঠামোগত নয়; এই সংস্কার সংবিধান এবং ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনবে, স্বৈরতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করবে। সংবিধানের সেই একব্যক্তিকেন্দ্রিক শেকড় যদি না উপড়ে ফেলা হয়, তাহলে নতুন সরকার এলেও ফ্যাসিবাদের রূপ বদলে যাবে মাত্র।”

সাংবিধানিক সংস্কারে গুরুত্ব

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “আমরা দেখেছি অতীতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণে আক্রান্ত হয়েছিল। সেই কাঠামোকে অক্ষুণ্ণ রেখে কোনো দলই প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। তাই গণপরিষদ নির্বাচন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার সীমা নির্ধারণসহ গঠনমূলক সংস্কারে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।”

সংলাপে এনসিপির পক্ষ থেকে জাতির প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “এই জাতির ওপর যে ঋণ আমরা করেছি, তা রক্তের ঋণ। আমরা তা পূরণ করব একটি ন্যায্য, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।”