ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS)–এর দীর্ঘদিনের প্রথা অনুযায়ী তাদের ‘প্রচারক’দের জন্য বিয়ে করা নিষিদ্ধ। এই নীতিকে ঘিরেই ফের আলোচনায় উঠে এসেছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি–র প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ৬০ বছর বয়সে দলীয় সহকর্মী রিঙ্কু মজুমদার-এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তিনি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন।
আরএসএসে প্রচারকদের বিয়ে নিষিদ্ধ কেন?
দ্বিতীয় সর-সঙ্ঘচালক মাধব গোলওয়ালকরের আমল থেকেই আরএসএসে প্রচারকদের বিয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর। কারণ, সংঘের আদর্শ অনুযায়ী, একজন প্রচারককে পরিবার ও পেশাগত জীবনের বাইরেও সংগঠনের কাজে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকতে হয়। সংসারী জীবন সংগঠনের সেই একাগ্রতা ও দায়িত্ব পালনে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা সংঘের।
দিলীপ ঘোষ কি এখনো প্রচারক?
না, দিলীপ ঘোষ ২০১৫ সালে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ ইউনিটের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের সময় থেকেই আরএসএসের ‘প্রচারক’ পদ থেকে অব্যাহতি পান। তাই সংঘের নিয়ম অনুযায়ী তার বিয়ে করার ক্ষেত্রে আর বাধা নেই—এমনটিই স্পষ্ট করেছেন আরএসএস নেতা ড. জিষ্ণু বসু।
মানবিক কারণেই কি এই বিয়ে?
ঘনিষ্ঠ মহলের বরাতে জানা গেছে, দিলীপ ঘোষের অশীতিপর মা ছেলের বিয়ে চেয়েছিলেন বহু বছর ধরে। তার ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবেই এই বিয়ে হয়েছে। এছাড়া, রিঙ্কু মজুমদারের সঙ্গে রাজনীতির মাধ্যমে পরিচয় থেকে ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্কে আত্মিক বন্ধন গড়ে ওঠে, যা বিবাহে পরিণতি পায়।
আরএসএসে ব্রহ্মচর্য নীতির বাস্তবতা
আরএসএস-এ একজন প্রচারক মাসিক ভাতা পান, সংগঠনের শাখা পরিচালনা ও সাংগঠনিক প্রশিক্ষণে নিযুক্ত থাকেন। সংসার গ্রহণ করলে সেই কাজের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এজন্যই সংঘের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে অনেকেই যেমন মোহন ভাগবত, বিয়ে না করেই সংঘের প্রতি নিজেদের সমর্পণ করেছেন।
আগেও প্রচারকেরা সংসারী হয়েছেন
লালকৃষ্ণ আদবাণী, কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, অরবিন্দ মেননের মতো বহু নেতা প্রচারক ছিলেন, পরে সংসার জীবন বেছে নিয়েছেন এবং সংঘের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। ফলে দিলীপ ঘোষের সিদ্ধান্তকে ব্যতিক্রম হিসেবে দেখা যাচ্ছে না।
কী বার্তা দিচ্ছে এই ঘটনা?
এটি একটি ব্যতিক্রম নয়, বরং দেখিয়ে দেয়, সংঘের কাঠামোর মধ্যে থেকেও ব্যক্তি জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকে—যদি তা নিয়ম মেনেই হয়। এটি সংগঠন ও ব্যক্তির মধ্যে ভারসাম্যের এক নিদর্শন। সংবাদমাধ্যমে আলোড়ন থাকলেও আরএসএস বা বিজেপির অভ্যন্তরে এই বিয়ে নিয়ে বড় কোনো আপত্তি দেখা যায়নি।
এই ঘটনা আরও একবার দেখিয়ে দিল—কট্টর আদর্শের মধ্যেও ব্যক্তি জীবনের মানবিক সিদ্ধান্ত ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা একই সঙ্গে টিকে থাকতে পারে।