বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্য (সেভেন সিস্টার্স) সংযোগে নেওয়া রেল প্রকল্পগুলো সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করেছে ভারত সরকার (Indian Government)। ভারতের অন্যতম অর্থনৈতিক দৈনিক দ্য হিন্দু বিজনেস লাইন–এর বরাতে জানা গেছে, প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপির এই রেল প্রকল্পগুলো কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, বরং আঞ্চলিক কৌশলগত যোগাযোগ সম্প্রসারণের অংশ ছিল।
স্থগিত হওয়া প্রধান প্রকল্পসমূহ
এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে ভারতের লক্ষ্য ছিল সিলিগুড়ি করিডোরের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সহজ রেলপথে যুক্ত করা। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভারতীয় শ্রমিকদের নিরাপত্তা উদ্বেগকে কারণ দেখিয়ে প্রকল্পগুলো সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য স্থগিত প্রকল্পগুলো হলো:
- আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ: ভারতীয় অনুদানে ১২.২৪ কিমি দীর্ঘ এই রেলপথের ৬.৭৮ কিমি বাংলাদেশে অবস্থিত।
- খুলনা-মোংলা রেলপথ: প্রায় ৩,৩০০ কোটি রুপির এই প্রকল্প মোংলা বন্দরকে মূল রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত করার কথা ছিল।
- ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেল সম্প্রসারণ: প্রায় ১,৬০০ কোটি রুপির প্রকল্প, চলছিল ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সহায়তায়।
ভারতের বিকল্প কৌশল ও নতুন পরিকল্পনা
‘চিকেনস নেক’ নামে পরিচিত সিলিগুড়ি করিডোরে নির্ভরতা কমিয়ে নতুন বিকল্প খুঁজছে দিল্লি। এখন ভারতের নজর ভুটান ও নেপালের দিকে। ভারতীয় রেল মন্ত্রণালয় বিবেচনায় নিচ্ছে নতুন রেল সংযোগ:
– বিহার ও উত্তরপ্রদেশে দ্বিগুণ ও চতুর্মাত্রিক রেললাইন সম্প্রসারণ
– বিরাটনগর-নিউ মাল (১৯০ কিমি) এবং গলগলিয়া-ভদ্রপুর-কাজলি বাজার (১২.৫ কিমি) নেপাল-ভারত সংযোগ প্রকল্প
– কুমেদপুর-আমবাড়ি ফালাকাটা (১৭০ কিমি) রেল সংযোগ
বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা
যদিও ভারত এই সিদ্ধান্তকে সাময়িক ও নিরাপত্তাভিত্তিক ব্যবস্থা হিসেবে ব্যাখ্যা করছে, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি বাংলাদেশের প্রতি কূটনৈতিক চাপের একটি সূক্ষ্ম বার্তা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে কৌশলগত স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। অন্যদিকে, এই স্থগিতাদেশ চীনসহ অন্যান্য রাষ্ট্রের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে অবকাঠামোগত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে।
মোংলা বন্দর সংযুক্তি প্রকল্পের অনিশ্চয়তা অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের জন্য ক্ষতির দিকেই ইঙ্গিত করে, কারণ এটি রাজস্ব আয়ের একটি বড় সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিল।