জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়ার দাবি করলেন সাবেক কোচ হাথুরুসিংহে

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, বরখাস্তের পর তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার ক্রীড়া ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘কোড স্পোর্টস’-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হাথুরুসিংহে বলেন, সে সময় তিনি আতঙ্কিত ছিলেন এবং নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।

বিসিবি বরখাস্ত করে হাথুরুসিংহেকে

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে নাজমুল হাসানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) দ্বিতীয়বারের মতো হাথুরুসিংহেকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর নাজমুল দেশত্যাগ করেন। এরপর অক্টোবরে হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করে নতুন বোর্ড, যার নেতৃত্বে ছিলেন ফারুক আহমেদ। বরখাস্তের কারণ হিসেবে অসদাচরণ ও চাকরিবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়।

আতঙ্কিত হয়ে বাংলাদেশ ছাড়েন

সাক্ষাৎকারে হাথুরুসিংহে বলেন, “বিসিবির সিইও নিজাম উদ্দিন চৌধুরী আমাকে বলেন, ‘আপনার চলে যাওয়া উচিত।’ তখন থেকেই আমার মধ্যে ভয় ঢুকে যায়।”

তিনি জানান, বাংলাদেশে থাকাকালে সাধারণত তার সঙ্গে একজন গাড়িচালক ও একজন বন্দুকধারী থাকত। কিন্তু বিদায়ের দিন তার সঙ্গে কেবল গাড়িচালক ছিলেন। এরপর ব্যাংকে যাওয়ার সময় টিভিতে প্রচারিত হয় যে, তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং একজন খেলোয়াড়কে (নাসুম আহমেদ) লাঞ্ছিত করেছেন।

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়ার ভয়

হাথুরুসিংহে বলেন, ব্যাংকের ব্যবস্থাপক তাকে সতর্ক করে বলেন, “মানুষ আপনাকে দেখে ফেললে এটা আপনার জন্য নিরাপদ নাও হতে পারে।” এরপর এক বন্ধুর সহযোগিতায় তিনি বিমানবন্দরে পৌঁছান। কোনো নিরাপত্তা ছাড়াই টুপি ও হুডি পরে তিনি রাতের সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করেন।

বিমানবন্দরে আবেগঘন বিদায়

হাথুরু জানান, তিনি ভয়ে ছিলেন বিমানবন্দরে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। কারণ আগের সরকারের মন্ত্রীদেরও এভাবে বিমান থেকে নামিয়ে আনা হয়েছিল। এক পর্যায়ে এক বিমানবাহিনী কর্মকর্তা তাকে বলেন, “আমি দুঃখিত কোচ, আপনি চলে যাচ্ছেন বলে আমি খুবই দুঃখিত। আপনি আমাদের দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন।” এই কথায় তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।

সত্য-মিথ্যা বিতর্ক

তবে হাথুরুসিংহের এসব দাবিকে অনেকেই অতিরঞ্জিত এবং বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন বলে মনে করছেন। কারণ তার বিরুদ্ধে জনরোষ বা সরাসরি হুমকির তথ্য সে সময় সামনে আসেনি। বরং অনেকেই চাইতেন তিনি থেকে যান।

দুই মেয়াদে প্রায় ৬ বছর বাংলাদেশ দলের কোচিংয়ে ছিলেন হাথুরুসিংহে। তার সময়ে দলের সাফল্য যেমন এসেছে, তেমনি ব্যর্থতাও ছিল উল্লেখযোগ্য।