তোফায়েল আহমেদের পালক পুত্র বিপ্লব ও স্ত্রীর নামে ৩৪ কোটি টাকার সম্পদ, দুদকের দুটি মামলা

আওয়ামী লীগ-এর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ-এর পালক পুত্র মইনুল হোসেন বিপ্লব ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান বিন্তি-এর নামে প্রায় ৩৪ কোটি টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে প্রায় সোয়া ১২ কোটি টাকার সম্পদের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। ফলে দুদক তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই পৃথক দুটি মামলা করেছে।

ভোলার প্রভাবশালী পরিবার ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা

তোফায়েল আহমেদের ভাই আলী আশরাফের ছেলে মইনুল হোসেন বিপ্লব ছোটবেলা থেকেই তোফায়েলের পালক পুত্র হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় তার প্রভাব ভোলা জেলাজুড়ে ব্যাপক ছিল। ত্যাগী নেতাদের উপেক্ষা করে তাকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বানানো হয়, যা স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়।

বিপ্লবের বড় ভাই আলী আজম মুকুলকে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য বানানো হয়। বর্তমানে তিনি একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।

আত্মগোপনে স্বামী-স্ত্রী

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে বিপ্লব পলাতক এবং তার স্ত্রী বিন্তিও আত্মগোপনে রয়েছেন। উল্লেখ্য, ইসরাত জাহান বিন্তি সাবেক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী একে এম শাহজাহান কামাল-এর কন্যা।

দুদকের অনুসন্ধান ও সম্পদ বিবরণ

ভোলা বিশেষ জজ আদালত-এ দাখিল করা মামলার নথিতে দেখা যায়, বিপ্লব ও তার স্ত্রীর নামে রয়েছে—
– মোট ১৩ কোটি ৬ লাখ টাকার জমি, ভবন ও ফ্ল্যাট
– ব্যাংকে স্থায়ী আমানত, শেয়ার ও ব্যবসায় বিনিয়োগ বাবদ ২০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা

মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৩ কোটি ৭০ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। বিপ্লবের বৈধ আয় ও ব্যয়ের হিসাব বাদ দিলে তার অবৈধ সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তার স্ত্রীর নামেও ৩৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে।

আয় উৎসের ভুয়া তথ্য

আয়কর নথিতে বিপ্লব দাবি করেন, বিভিন্ন সময়ে রেমিট্যান্স, মাছচাষ, গাড়ি বিক্রি ও ব্যবসার মাধ্যমে তিনি ৭৪ কোটি টাকার উপার্জন করেছেন। তবে দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব তথ্য ভুয়া এবং কোনো বৈধ দলিলপত্র নেই।

মামলা ও আইনগত ধারা

দুদকের সহকারী পরিচালক খোন্দকার কামরুজ্জামান দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭ ধারায় বিপ্লব ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। তদন্তে আরও অবৈধ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেলে তা যুক্ত করা হবে বলেও মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ভোলা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীর বলেন, “এটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ আমলে ভোলায় চলা বেপরোয়া লুটপাটের ছোট্ট নমুনা। আমার তো মনে হয় এটুকুই নয়, আরও অনেক সম্পদ রয়েছে যা এখনো তদন্তে আসেনি। এসব কিছুই হয়েছে তোফায়েল আহমেদের ছত্রছায়ায়।”

বিপ্লব ও তার স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।