ভবেশ রায়ের মৃত্যু নিয়ে অতিরঞ্জন কি আওয়ামী লীগের সমন্বিত প্রচারণা ছিল?

দিনাজপুর (Dinajpur) জেলার বিরল উপজেলা (Biral Upazila)র বাসিন্দা ভবেশ চন্দ্র রায় (Bhobesh Chandra Roy) এর মৃত্যুকে ঘিরে এখনো নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ তদন্তাধীন, তবে বিভিন্ন মহল থেকে তা ‘হত্যাকাণ্ড’ বলে অতিরঞ্জনের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের (Awami League) সাথে সম্পৃক্ত সাংবাদিকদের প্রতিবেদন ঘিরে এ প্রশ্ন জোরালো হয়েছে— এটি কি ছিল একটি সমন্বিত মিডিয়া ক্যাম্পেইন?

তিনটি সম্ভাব্য ঘটনা, কিন্তু স্পষ্ট প্রমাণ নেই

ভবেশের মৃত্যু নিয়ে এখন পর্যন্ত তিনটি সম্ভাবনার কথা সামনে এসেছে:

  1. পূর্বপরিকল্পিত হত্যা
  2. ঋণ সংক্রান্ত বিরোধের জেরে অনিচ্ছাকৃত নির্যাতনে মৃত্যু
  3. স্বাভাবিকভাবে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মৃত্যু

তবে ময়নাতদন্তে গুরুতর আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। নিহতের পরিবার গলায় আঘাতের কথা বললেও তা প্রমাণসাপেক্ষ নয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রত্যক্ষদর্শীর কোনো নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্যও মেলেনি।

সংবাদমাধ্যমে ‘হত্যা’ হিসেবে রিপোর্ট—একই লেখকের একাধিক প্রতিবেদন

২১ এপ্রিলের আগেই ২০ এপ্রিলই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই ঘটনাকে নিশ্চিতভাবে “হত্যা” হিসেবে প্রকাশ করা হয়। যেমন:

  1. The Daily Star: “Hindu community leader ‘beaten to death after abduction'”
  2. কালবেলা: “বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা”
  3. আমাদের সময়, আজকের রিপোর্ট, ইনকিলাব, আজকের পত্রিকা, মোহনা টিভি—সবগুলোতেই একই ধাঁচের শিরোনাম ও ভাষা।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য—এই ৭টি প্রতিবেদন করেছেন মাত্র ৩ জন সাংবাদিক। যার মধ্যে ৪টি প্রতিবেদন করেছেন এম এ কুদ্দুস, একজন সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও ২০১৯ সালের ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। বাকি ২টি প্রতিবেদন করেছেন সুবল চন্দ্র রায় (Subol Chandra Roy), যিনি খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (Khalid Mahmud Chowdhury)র ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছিলেন।

সাংবাদিক না নেতা?

সুবল চন্দ্র রায় একই সঙ্গে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার উপজেলা সাধারণ সম্পাদক এবং একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি। অথচ তিনিই একই ঘটনায় একদিকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন ভুক্তভোগী সংগঠক হিসেবে, আবার অন্যদিকে প্রতিবেদন করছেন সাংবাদিক পরিচয়ে। যা সাংবাদিকতার নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তোলে।

মিডিয়া ‘কো-অর্ডিনেশন’ ও ভারতের প্রতিক্রিয়া

ডেইলি স্টার তাদের ভুল স্বীকার করে প্রতিবেদন সরিয়ে নিলেও, ঘটনার দিনই ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো সেটি তুলে ধরে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানায়। এতে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশের কয়েকজন আওয়ামী ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকের ‘সমন্বিত রিপোর্টিং’ এবং ভারতের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কি শুধুই কাকতালীয়? নাকি এটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত আন্তর্জাতিক প্রচারণা?