শেখ হাসিনার এনআইডি লক, ২২ ধরনের নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত

রাষ্ট্র ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত ও ভারতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) এবং তার পরিবারের ১০ সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) (NID) লক করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। এনআইডি লক হওয়ায় তারা ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও ২২ ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।

এনআইডি লকের পরিণতি

ইসির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীর (ASM Humayun Kabir) এর মৌখিক নির্দেশে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়।

এনআইডি লক হওয়া ১০ জন হলেন:
– শেখ হাসিনা
সজীব ওয়াজেদ জয় (Sajeeb Wazed Joy)
সায়মা ওয়াজেদ (Saima Wazed)
শেখ রেহানা (Sheikh Rehana)
টিউলিপ সিদ্দিক (Tulip Siddiq)
– আজমিনা সিদ্দিক
– শাহিন সিদ্দিক
– বুশরা সিদ্দিক
– রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক
– তারিক আহমেদ সিদ্দিক

২২টি সেবা থেকে বঞ্চিত

জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া বাংলাদেশে নিম্নোক্ত ২২টি সেবা নেওয়া যায় না:
– পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স, শেয়ার বিও হিসাব
– ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা ও ঋণ গ্রহণ
– গাড়ি রেজিস্ট্রেশন, মোবাইল/টেলিফোন সংযোগ, গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ সংযোগ
– নির্বাচন অংশগ্রহণ বা ভোটার হিসেবে পরিচয় নিশ্চিতকরণ
– চাকরির আবেদন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রেশন
– সরকারি ভর্তুকি ও ভাতা উত্তোলন, বিমা সেবা, ই-টিকেটিং, ব্যবসা নিবন্ধন, অপরাধী শনাক্তকরণ ইত্যাদি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (International Crimes Tribunal) গত বছরের ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে পরোয়ানা জারি করে এবং ১৮ নভেম্বর তাকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেয়। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৩২৪টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ২৯৭টি ঢাকায় এবং ২৭টি ঢাকার বাইরে।

আইন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধে দোষী সাব্যস্ত কেউ ভোটার হতে পারেন না এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণেরও অধিকার হারান। নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (Representation of the People Order, 1972) এবং সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, এই অপরাধে দোষী ব্যক্তি আজীবন নির্বাচনের অযোগ্য।

পলাতক অবস্থা ও প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা ভারতে (India) পালিয়ে যান এবং এখনো সেখানেই অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ সরকার (Bangladesh Government) শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে ভারতের কাছে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে।

আইনি পরিণতি এবং নির্বাচন কমিশনের অবস্থান

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মতে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২(ণ) অনুচ্ছেদ ধরে রাখার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও তার শরিকদের আজীবন অযোগ্য ঘোষণা করা সম্ভব। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল (Asif Nazrul) জানিয়েছেন, জুলাইয়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড-সংক্রান্ত মামলার কয়েকটির রায় আগামী অক্টোবরের মধ্যে ঘোষণা হবে, যেখানে শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা অভিযুক্ত।