বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন হলে বেগম খালেদা জিয়া–কে ৪০ বছরের ভিটা থেকে এক কাপড়ে বের হতে হতো না। আর এই অন্যায় থেকেই প্রমাণ হয় যে বিচার ব্যবস্থার সংস্কার এখন সময়ের দাবি। এক জাতীয় দৈনিককে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “সংস্কার সংস্কার বলতে বলতে আট মাস পেরিয়ে গেছে, অথচ কার্যত মানুষ কোনো বাস্তব পরিবর্তন দেখতে পায়নি।”
জামায়াত ও এনসিপি প্রসঙ্গে
গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া এনসিপি-র কার্যক্রম সম্পর্কে কায়সার কামাল বলেন, গণতান্ত্রিক মানসিকতা থাকলে সব দলেরই রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে। তবে তারা ‘কিংস পার্টি’ কি না—সেটা নির্ধারণ করবে জনগণ।
তিনি বলেন, বিএনপি বরাবরই বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের সঙ্গে তাদের দূরত্ব নেই। তারেক রহমান আগেই বলেছিলেন, “যেসব দল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, তাদের সবাইকে নিয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত হবে।” এটি থেকেই বোঝা যায়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী-র সঙ্গে বিএনপির সুসম্পর্ক রয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান
আগামী জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে কায়সার কামাল বলেন, “নির্বাচনের রোডম্যাপ এখনো পরিষ্কার নয়। যৌক্তিক সময় শেষের পথে। তাই ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “বিএনপির কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয় কে ক্ষমতায় যাবে, গুরুত্বপূর্ণ হলো জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন।”
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলার অগ্রগতি
সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, খালেদা জিয়ার নামে এখন আর কোনো মামলা নেই এবং তারেক রহমানের বেশিরভাগ মামলাও খারিজ হয়ে গেছে। একটি মামলার কার্যক্রম নিম্ন আদালতে চলমান রয়েছে।
তানভীর প্রসঙ্গ ও রাজনৈতিক দুর্নীতি
তদবির বাণিজ্য প্রসঙ্গে কায়সার কামাল বলেন, “আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত প্রায় ৬০ লাখ মামলার গতি নেই বললেই চলে। এতে মানুষ ক্ষুব্ধ এবং রাজনৈতিক কর্মীরা হতাশ।”
বিনিয়োগ ও অর্থনীতি
তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার জনগণ দ্বারা নির্বাচিত নয়। এ কারণে দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে না, আস্থা সংকট তৈরি হয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে বিনিয়োগে অগ্রগতি সম্ভব নয়।”
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা
সাক্ষাৎকারে কায়সার কামাল বলেন, “যদি বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকত তাহলে খালেদা জিয়াকে এভাবে অপমানজনকভাবে বাড়ি ছাড়তে হতো না। বিচার বিভাগের সংস্কার প্রয়োজন। আমরা বলেছি, মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে বিচার বিভাগকে স্বাধীন করা হোক।”
তিনি আরও যোগ করেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন, সেটি একটি বড় বার্তা। কারণ জনগণ ও গণতন্ত্রকে দীর্ঘদিন উপেক্ষা করা যায় না।”