হাইকোর্টের রায়ে বহাল ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৫ জনের যাবজ্জীবন
সাড়ে পাঁচ বছর আগে ঘটে যাওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট BUET) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ (Abrar Fahad) হত্যাকাণ্ডকে পূর্বপরিকল্পিত আখ্যা দিয়ে হাইকোর্ট তার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে। মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি ও আদালতের পর্যবেক্ষণ
১৩১ পৃষ্ঠার রায়ের প্রত্যয়িত অনুলিপি গত মাসের শেষদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু (Azizur Rahman Dulu) হাতে পেয়েছেন বলে জানান।
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে অভিযুক্তরা। অথচ এমন নির্মম ও অমানবিক হত্যার কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই। এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
উচ্চ আদালতের রায় ও প্রতিক্রিয়া
হাইকোর্ট (High Court) বিচারিক আদালতের রায় যথাযথ ও সাক্ষ্যপ্রমাণভিত্তিক মনে করে ডেথ রেফারেন্স অনুমোদন ও আপিল খারিজ করেছে।
আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজ (Abrar Fayaz) বলেন, “রায় বহাল রয়েছে। আমরা সন্তুষ্ট। দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি।” আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ (Barkat Ullah) বলেন, “রায় যেন দ্রুত কার্যকর হয়, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।”
মামলার পটভূমি
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল (Sher-e-Bangla Hall of BUET) থেকে আবরারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগ (Chhatra League)–এর নেতা-কর্মীরা, যেটি বর্তমানে নিষিদ্ধ সংগঠন।
২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। রায়ে বিচারক উল্লেখ করেন, অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজশে শিবির সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিহীন অভিযোগে আবরারকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
দণ্ডিত আসামিদের তালিকা
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক বুয়েট শিক্ষার্থীরা: মেহেদী হাসান (রাসেল), মো. অনিক সরকার, মেহেদী হাসান (রবিন), ইফতি মোশাররফ, মো. মনিরুজ্জামান, মো. মেফতাহুল ইসলাম, মো. মাজেদুর রহমান, মো. মুজাহিদুর রহমান, খন্দকার তাবাককারুল ইসলাম, হোসাইন মোহাম্মদ তোহা, মো. শামীম বিল্লাহ, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, মুনতাসির আল (জেমি), মো. শামসুল আরেফিন, মো. মিজানুর রহমান, এস এম মাহমুদ, মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল, এহতেশামুল রাব্বি ও মুজতবা রাফিদ।
তাদের মধ্যে চারজন পলাতক—মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল, এহতেশামুল রাব্বি, মুজতবা রাফিদ এবং মুনতাসির আল (জেমি), যিনি গত বছরের ৬ আগস্ট গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার (Gazipur High Security Central Jail) থেকে পালিয়ে যান।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিরা:
মুহতাসিম ফুয়াদ হোসেন, মো. আকাশ হোসেন, মুয়াজ আবু হুরায়রা, অমিত সাহা ও ইশতিয়াক আহমেদ।
আইনগত প্রক্রিয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপ
২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি মামলার রায়সহ ডেথ রেফারেন্স নথি হাইকোর্টে পৌঁছায়। শুনানি শেষে গত ১৬ মার্চ বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান (AKM Asaduzzaman) ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেন (Syed Enayet Hossain) এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় প্রদান করেন।
আইনজীবীরা জানান, হাইকোর্টের রায় চূড়ান্ত নয়; আসামিপক্ষ আপিল বিভাগে (Appellate Division) আপিল করবে। আপিলের রায় পরবর্তী পর্যায়ে রিভিউয়ের আওতায় আসবে।
ফাইনাল রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে কারা কর্তৃপক্ষ রায় কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে। তবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ থাকবে।