প্রায় ১৭ বছর পর দেশে ফিরেছেন ডা. জোবাইদা রহমান (Dr. Zubaida Rahman), সঙ্গে রয়েছেন তার শাশুড়ি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া (Khaleda Zia)। এই প্রত্যাবর্তন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা। অনেকের প্রশ্ন—তিনি কি এখন সক্রিয়ভাবে বিএনপি (BNP)-র নেতৃত্বে আসছেন? নাকি ফিরে যাচ্ছেন তার পুরনো চিকিৎসা পেশায়?
রাজনৈতিক জল্পনা-কল্পনা ও বিএনপির নীরবতা
তারেক রহমান (Tarique Rahman)-এর আগেই দেশে ফেরায় ডা. জোবাইদা রহমানকে ঘিরে রাজনীতিতে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ নিয়ে বাড়ছে কৌতুহল। কেউ কেউ বলছেন, এটি নিছক পারিবারিক সফর, আবার অনেকে মনে করছেন, এটি হতে পারে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ।
বিএনপির অনেক নেতাই এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাচ্ছেন না। তবে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (Major (Retd.) Hafiz Uddin Ahmed) বলেন, “সিলেট অঞ্চলে জোবাইদা রহমানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে তিনি রাজনীতিতে আসবেন কিনা, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। তবে তিনি যদি রাজনীতি করেন, তাহলে আমরা তাকে স্বাগত জানাব।”
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (University of Dhaka)-র রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ (Sabbir Ahmed) মনে করেন, “জোবাইদা রহমান দীর্ঘদিন রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য ছিলেন। ফলে তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং পরিপক্বতা রয়েছে। রাজনীতিতে আসা তার জন্য কঠিন হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে নৈতিক শূন্যতা বিরাজ করছিল। জোবাইদা রহমান যদি রাজনীতিতে যুক্ত হন, তাহলে তিনি সেই শূন্যতা পূরণ করতে সক্ষম হবেন এবং এতে বিএনপির নৈতিক শক্তি ও জনপ্রিয়তা বাড়বে।”
চিকিৎসা পেশা ও আইনি জটিলতা
১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার (BCS Health Cadre)-এ প্রথম স্থান অধিকার করেন জোবাইদা রহমান। রাজনীতির প্রতি আগ্রহ থাকলেও তিনি বরাবরই চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তবে রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে এবং স্বামী তারেক রহমানের অসুস্থতার কারণে তিনি লন্ডনে চলে যান।
২০১৪ সালে কর্মস্থলে অনুপস্থিতির অভিযোগে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকারের সিদ্ধান্তে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এর আগে, ২০০৮ সালে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড এবং ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। তবে ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেই সাজা স্থগিত করা হয়েছে।
ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ভূমিকা?
বিএনপি নেতৃত্বে নৈতিক শূন্যতা ও জনপ্রিয়তা সংকটে ডা. জোবাইদা রহমানের সক্রিয় অংশগ্রহণ কি দলের চেহারা পাল্টে দেবে? আপাতত এ প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে, তবে রাজনীতির ময়দানে তার প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা ঘিরে আলোচনা আরও তীব্র হচ্ছে।