নির্বাচন, সংস্কার এবং গণহত্যা ও ফ্যাসিবাদে জড়িতদের বিচার এবং আওয়ামী লীগ (Awami League) নিষিদ্ধ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ইস্যুতে বিএনপি (BNP), জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami) ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (NCP) সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গভীর মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে।
মতবিরোধের মূলে তিনটি প্রধান ইস্যু
এই তিন ইস্যুকে ঘিরেই রাজনৈতিক অচলাবস্থা প্রকট হচ্ছে। সরকার ও বিরোধীদলগুলো ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করলেও এখনও পর্যন্ত কোনো কার্যকর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়তে না পারার কারণেই মতৈক্য ব্যাহত হচ্ছে। বিশ্লেষক ড. সাইফুল ইসলাম (Dr. Saiful Islam) জানান, মৌলিক ও স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোতে মতপার্থক্য স্বাভাবিক হলেও সাধারণ সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য হওয়া উচিত।
দলগুলোর অবস্থান
বিএনপি চায় ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন, তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয়। দলটি বিদ্যমান নির্বাচন পদ্ধতির পক্ষেই রয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায় এবং নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও পিআর পদ্ধতির পক্ষে।
এনসিপি আগে মৌলিক সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচন চায় এবং জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে। তারা বর্তমানে প্রচলিত সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি তুলেছে।
গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ প্রসঙ্গ
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir) বলেন, বিচারের দাবি জনগণের, এবং কোন দল থাকবে না থাকবে সে সিদ্ধান্তও জনগণের।
ডা. শফিকুর রহমান (Dr. Shafiqur Rahman) জানান, নির্বাচন পূর্বে দৃশ্যমান সংস্কার না হলে এপ্রিল পার হওয়া উচিত নয়।
জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার (Professor Mia Golam Porwar) বলেন, দল নিষিদ্ধ করা সরকারের কাজ।
NCP-র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (Nahid Islam) বলেন, আওয়ামী লীগকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং ‘জুলাই সনদ’ে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।
সংস্কার নিয়ে ভিন্নমত
[বিএনপি (BNP)] সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব—এক ব্যক্তি তিনটি পদে থাকতে পারবেন না—এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে। তারা মনে করে, এটি দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়।
[জামায়াত (Jamaat-e-Islami)] সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী একজন হতে পারেন এবং দলীয় প্রধান অন্য কেউ হতে পারেন বলে মত দিয়েছে।
[এনসিপি (NCP)] সংবিধান বাতিল ও নতুন সংবিধানের দাবি তুলেছে, যেখানে তারা গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলেছে।
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ৪ বছর করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বেশিরভাগ দল; তবে এনসিপি এর পক্ষে।
নির্বাচন পদ্ধতি ও রোডম্যাপ
[বিএনপি (BNP)] এবং তাদের মিত্র দলগুলো [সংখ্যানুপাতিক (PR)] পদ্ধতির ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার বিপক্ষে।
[জামায়াত (Jamaat-e-Islami)], ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (Islami Andolan Bangladesh) এবং NCP পিআর পদ্ধতির এবং স্থানীয় নির্বাচন আগে করার পক্ষে।
সালাহউদ্দিন আহমদ (Salahuddin Ahmed) বলেন, যারা জনগণের রায়কে ভয় পায়, তারাই পিআর পদ্ধতি চায়।
নাগরিক ঐক্য (Nagorik Oikya)-র মাহমুদুর রহমান মান্না (Mahmudur Rahman Manna) বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কারেই ঐকমত্য জরুরি।
নুরুল হক নুর (Nurul Haque Nur) বলেন, জাতীয় সনদ তৈরি করে সব দল স্বাক্ষর করুক এবং গণভোটে সেটি অনুমোদন করা হোক।
উপসংহার
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট হলেও বিশ্লেষকদের আশা, গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থে কোনো না কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।