সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিস্তৃত তদন্ত
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন উর রশীদ (Mohammad Harun Ur Rashid) এর বিতর্কিত ‘ভাতের হোটেল’ ঘিরে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) (Anti-Corruption Commission)।
হাজার কোটি টাকার ‘গুপ্তধন’
দুদকের তদন্ত সূত্র জানায়, হারুন ও তার পরিবারের নামে এবং বেনামে থাকা সম্পদের পরিমাণ হাজার কোটি টাকার বেশি। তার স্ত্রী শিরিন আক্তার (Shirin Akter) এবং ভাই এ বি এম শাহরিয়ার (ABM Shahriar)-এর বিরুদ্ধেও আলাদা মামলা হয়েছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে হারুনের বিরুদ্ধে ১৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা, স্ত্রী শিরিনের নামে ১০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং ভাই শাহরিয়ারের নামে ১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য উঠে এসেছে।
উত্তরা কেন্দ্রিক সম্পদের জাল
তদন্তে জানা যায়, রাজধানীর উত্তরা (Uttara) এলাকায় হারুনের নামে ও বেনামে অন্তত ১৮টি সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে। এর মধ্যে রয়েছে সেক্টর ৩-এর ১৪ নম্বর বাড়ি ‘হা-মীম’, যেটি পরবর্তীতে ব্যবসায়ী গোলাম হাসনাইন হিরন (Golam Hasnain Hiron)-এর কাছে ৪০ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়।
তাছাড়া, সেক্টর ৫, ৭, ৯, ১০, ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর রোডে একাধিক ভবন, বাণিজ্যিক প্লট এবং মার্কেট রয়েছে তার। উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৮তলা একটি বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করতেন হারুন। এই বাড়ির বাজার মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
উত্তরার ১০ কাঠা জমিতে ১০ তলা একটি মার্কেট নির্মাণ করেন তিনি, যার মূল্য প্রায় ৮০ কোটি টাকা। মার্কেটের দ্বিতীয় তলা থেকে দশম তলা পর্যন্ত এখনও খালি রয়েছে।
অন্যান্য জেলা ও স্থানের সম্পদ
উত্তরার বাইরে গাজীপুর (Gazipur), সাভার (Savar), টেকনাফ (Teknaf), ও খাগড়াছড়ি (Khagrachari) জেলায় রয়েছে হারুনের বিপুল সম্পদ। টেকনাফের মেরিন ড্রাইভের রাজারছড়া এলাকায় কয়েক বিঘা জমি কিনে রিসোর্ট নির্মাণের পরিকল্পনাও করেন তিনি।
বনানী (Banani) কবরস্থানের পাশে ২০ কাঠা জমি ৭০ কোটি টাকায় বিক্রির তথ্যও উঠে এসেছে দুদকের হাতে।
সম্পদ জব্দের নির্দেশ
বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) (Bangladesh Financial Intelligence Unit) ইতোমধ্যে হারুন ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে। আদালতের আদেশে হারুনের ফ্ল্যাট, প্লট, ভবন, কোম্পানির শেয়ার, ব্যাংক হিসাবসহ বিভিন্ন সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।
২০২৫ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিব (Zakir Hossain Galib) এই সম্পদ জব্দের আদেশ দেন। এর আগেও ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন ও তার পরিবারের বহু সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেয় আদালত।
পলাতক হারুন
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের পতনের পর থেকে হারুন পলাতক রয়েছেন। তার খোঁজে অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।