মন খারাপের দেশে দুঃস্বপ্নের ছায়া—চট্টগ্রাম বন্দর ও জাতীয় সংকট নিয়ে গোলাম মাওলা রনির বিশ্লেষণ

২০২৫ সালের মে মাসের শুরুতে দেশব্যাপী চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও কূটনৈতিক সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গোলাম মাওলা রনি (Golam Maula Rony)। তিনি বলেন, একদিকে রাজধানীজুড়ে হেফাজতে ইসলাম (Hefazat-e-Islam) নারীনীতি সংস্কার কমিশনের প্রতিবাদে আন্দোলনে ব্যস্ত, অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর (Chattogram Port) বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার গুঞ্জনে সামাজিক মাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোড়ন।

চট্টগ্রাম বন্দর: স্মৃতি, ব্যবসা ও বেদনার উৎস

রনি জানান, তার ৩০ বছরের ব্যবসায়িক জীবনের সূচনা হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরে সার্ভে ও ইন্সপেকশন সেবা দিয়ে। জেটি, ওয়্যারহাউস, শিপিং এজেন্ট থেকে শুরু করে কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তার মতে, বন্দর ও কাস্টমস খাতের সঙ্গে এমন দীর্ঘ অভিজ্ঞতার পরও তিনি কোনো যুক্তি খুঁজে পান না কেন এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর হারানো মানে জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতির অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হওয়া।” বন্দরের ওপর তার নস্টালজিয়া, দীর্ঘ রাত জেগে কাজের অভিজ্ঞতা ও দেশীয় শিল্পের বিকাশে এই বন্দরের ভূমিকা তাকে আরও বিষণ্ন করে তোলে।

রোহিঙ্গা সংকট ও সীমান্ত পরিস্থিতি

বাংলাদেশ-মিয়ানমার (Bangladesh-Myanmar) সীমান্তে উত্তেজনা প্রসঙ্গে রনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা আজ অনিবার্য পরিণতিতে পৌঁছেছে। পূর্বাভাস দিয়েও তিনি শুনতে পাননি। উল্টো সবাই রোহিঙ্গাদের মেহমানদারি করতে কক্সবাজার গিয়েছিল। আজ সেই একই অঞ্চলে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও ভূরাজনৈতিক শঙ্কা

রনি তার লেখায় কোয়ান্টাম মেকানিক্স (Quantum Mechanics) তত্ত্বের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, পৃথিবীর প্রতিটি ঘটনা পূর্বনির্ধারিত। তার মতে, ১৬৭৫ থেকে শুরু করে প্রতি ৫০-১০০ বছরে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে যে ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে, তা বর্তমান পরিস্থিতির প্রতিফলন। তিনি বলেন, “যে পথ আমরা হাঁটছি তা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ছাড়া কিছু নয়।”

বৃহস্পতি, ইবনে খালদুন ও রাষ্ট্রচিন্তার প্রসঙ্গ

ইবনে খালদুন (Ibn Khaldun) এর রাষ্ট্র তত্ত্ব উল্লেখ করে রনি বলেন, রাষ্ট্রনায়করা যখন সময়ের চেতনায় সচেতন হন, তখনই জাতি রক্ষা পায়। তিনি ব্যঙ্গ করে বলেন, যারা শুভ সময়ে ভূতের পুজো করে, তাদের জন্যই বাংলার প্রবাদ ‘সুখে থাকতে ভূতে কিলায়’ প্রযোজ্য হয়ে পড়ে।

লেখক এই নিবন্ধে স্পষ্ট করেছেন, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, ব্যবসায়িক প্রজ্ঞা এবং বিশ্ব রাজনীতির পর্যবেক্ষণ থেকে তিনি চট্টগ্রাম বন্দরসহ নানা ইস্যুতে দেশের সামনে দুর্যোগের আশঙ্কা করছেন।