হাইকোর্টে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ ও পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে চলমান রুলের শুনানিতে আইনজীবী শিশির মনির (Shishir Monir) অধস্তন আদালতের বিচারকদের ওপর আইন মন্ত্রণালয় (Law Ministry)–র খবরদারি এবং দ্বৈত শাসনের চিত্র তুলে ধরেছেন।
আদালতের নিয়ন্ত্রণে হস্তক্ষেপের অভিযোগ
শিশির মনির বলেন, “আগে ফোন আসত—কার জামিন হবে, কারটা হবে না—এমন নির্দেশনা দেওয়া হতো। সুপ্রিম কোর্টের বাজেট থেকে টাকা বাঁচিয়ে কম্পিউটার কিনে দিতে হয়, কারণ আইন মন্ত্রণালয় দায়িত্ব পালন করে না, বরং ভয় দেখায়।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, নিম্ন আদালতের বিচারকরা বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রভাবের শিকার হন। উদাহরণ দিয়ে বলেন, অতীতে ঢাকার আদালতে একজন ‘বিরাট’ সাক্ষী সজীব ওয়াজেদ জয় (Sajeeb Wazed Joy) সাক্ষ্য দিতে গেলে বিচারক নিজে তাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেন, যাতে তার মান ক্ষুণ্ন না হয়। এভাবেই অধস্তন আদালতের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ এবং দ্বৈত শাসন প্রসঙ্গে
শিশির মনির বলেন, যতদিন সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ থাকবে, ততদিন স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তিনি দাবি করেন, সুপ্রিম কোর্ট যেন প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ পায় এবং আলাদা বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠিত হয়।
শুনানিতে বিচারপতি আহমেদ সোহেল (Justice Ahmed Sohel) ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরী (Justice Debashish Roy Chowdhury)–এর বেঞ্চ শুনানি মুলতবি করে ৬ মে পর্যন্ত সময় দেন।
ডুয়াল অথরিটি ও নিয়ন্ত্রণের সীমাবদ্ধতা
শিশির মনির জানান, হাইকোর্ট বিভাগ অধস্তন আদালতের অনিয়ম তদন্ত করলেও ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিতে পারে না। এজন্য আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে যেতে হয়, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে।
তিনি আরও বলেন, “প্রধান বিচারপতি বলেন, এটা দ্বৈত শাসন। একদিকে সুপ্রিম কোর্ট, অন্যদিকে আইন মন্ত্রণালয়। কিন্তু বদলি, পদোন্নতি, এমনকি শাস্তিও সুপ্রিম কোর্ট দিতে পারে না।”
বিচারকদের দুর্নীতি ও প্রভাব প্রসঙ্গ
আইনজীবী শিশির মনির উল্লেখ করেন, সম্প্রতি দুদক অধস্তন আদালতের ১৫ জন বিচারকের বিরুদ্ধে চিঠি ইস্যু করেছে। তারা কেউ কেউ ঢাকার সিএমএম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং প্রশাসনিক ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি প্রসঙ্গে আপিল বিভাগে মন্তব্য
৬ মে সকালে আপিল বিভাগের এক শুনানিতে শিশির মনির বলেন, ২০১৩ সালে কাদের মোল্লা (Quader Molla)–র ফাঁসি সংক্ষিপ্ত রায়ে কার্যকর করা হয়েছিল, যা নির্বাচনের পূর্বে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, রিভিউ খারিজের কোনো লিখিত কারণ না দিয়েই ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এটা উপমহাদেশে বিরল।
এ টি এম আজহারুল ইসলামের মামলার প্রেক্ষাপট
এ টি এম আজহারুল ইসলাম (ATM Azharul Islam)–এর রিভিউ গ্রহণ করে পুনরায় শুনানির সিদ্ধান্ত নেয় আপিল বিভাগ। ২০১৪ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যা ২০১৯ সালে আপিল বিভাগে বহাল থাকে।