দুর্নীতির বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র কমিটি জানিয়েছে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা। এই অর্থপাচারের বড় একটি অংশই হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জ (PDB) এর নামে। এই চক্রের মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত হয়েছেন সাবেক সরকারের প্রভাবশালী সাত ব্যক্তি, যাদের পরিচিতি দেওয়া হয়েছে ‘সেভেন স্টার’ (Seven Star) গ্রুপ নামে।
‘সেভেন স্টার’ গ্রুপে কারা আছেন?
এই গ্রুপের সদস্যরা হলেন: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) এর বোন শেখ রেহানা (Sheikh Rehana), পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় (Sajeeb Wazed Joy), শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক (Radwan Mujib Siddiq), সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ (Nasrul Hamid), সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ (Abul Kalam Azad), ও সাবেক মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস (Dr. Ahmad Kaikaus)। এই পাচারে সহযোগিতা করেছেন মুহাম্মদ আজিজ খান (Muhammad Aziz Khan), যিনি সামিট গ্রুপ (Summit Group) এর মালিক।
ক্যাপাসিটি চার্জ আর ডলার সংকট
বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মালিকানা পাওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর ধরে ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে। এসব চার্জ পরিশোধ করা হতো ডলারে, যার ফলে দেশে তীব্র ডলারসংকট তৈরি হয়। এমনকি বৈধ ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় ডলারও পেত না ব্যবসায়ীরা। বহু ব্যাংক তারল্য সংকটে দেউলিয়া হয়ে পড়ে।
যেসব কোম্পানি বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়েছে
মূল অর্থ পাচার হয়েছে সামিট গ্রুপ, ইউনাইটেড গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, হোসাফ গ্রুপ, মোহাম্মদী গ্রুপ, ডরিন গ্রুপ, ম্যাক্স গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ, কনফিডেন্স গ্রুপ, বারাকা গ্রুপ, রিজেন্ট গ্রুপ, এনার্জিপ্যাক সহ অন্যান্য অনেক কোম্পানির মাধ্যমে।
এছাড়া আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্যের অ্যাগ্রিকো, চীনের এরদা, সিঙ্গাপুরের সেম্বকর্প এবং যুক্তরাষ্ট্রের এপিআর এনার্জি ও নিউ ইংল্যান্ড পাওয়ার কম্পানি।
দুর্নীতি নিয়ে টিআইবি ও দুদকের অবস্থান
টিআইবি (TIB) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান (Dr. Iftekharuzzaman) বলেন, “বিশেষ আইনের সুযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ খাতে সর্বোচ্চ দুর্নীতি হয়েছে। এর বিচার হওয়া দরকার।” একইভাবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) (Anti-Corruption Commission) জানিয়েছে, বিদ্যুৎ খাতের লুটপাটের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়েছে।