পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস মিলেছে। বর্তমান পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন (Mo-Jasim-Uddin) অস্বাভাবিকভাবে বিদায়ের পথে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র। চলতি মাসের শুরুতেই তার পরিবর্তনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আচমকা সিদ্ধান্তে সেগুনবাগিচায় অস্থিরতা
সূত্র জানায়, সেগুনবাগিচার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (Foreign-Ministry) ভবনে হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত বজ্রপাতের মতো নেমে আসে, যার প্রভাব পড়ে পুরো প্রশাসনে। সচিবের মনমরা অবস্থায় কর্মস্থলে নির্লিপ্ততা দেখা গেছে। গত সপ্তাহ থেকে তিনি কার্যত ‘না করার মতো’ অফিস করছেন। বৈঠকে না গিয়ে প্রতিনিধিদের পাঠানো, নিরবতা এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের অনিশ্চয়তায় পড়ে যাওয়ার ফলে গোটা মন্ত্রণালয়ে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
স্থগিত এফওসি বৈঠক ও কূটনৈতিক জটিলতা
আগামী ২৮ মে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad-Yunus) এর জাপান (Japan) সফরকে কেন্দ্র করে ১৫ মে টোকিও (Tokyo)তে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক (এফওসি) নির্ধারিত ছিল, যার নেতৃত্ব দেয়ার কথা ছিল মো. জসীম উদ্দিনের। কিন্তু সচিব নিজে যেতে না চাওয়ায় ওই বৈঠক স্থগিত করা হয়, যা দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক অস্বস্তি সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের হস্তক্ষেপে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়া হয় এবং এখন ওই বৈঠকে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নজরুল ইসলাম (Dr-Nazrul-Islam)।
সম্ভাব্য বিকল্প ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের পক্ষ থেকে ৩টি বিকল্প প্রস্তাব বিবেচনায় রয়েছে:
১. সচিব ছুটিতে যাবেন,
২. তাকে একটি দেশে রাষ্ট্রদূত (Ambassador) হিসেবে পাঠানো হবে,
৩. রাষ্ট্রদূত পদায়নের আগে তিনি ফরেন সার্ভিস একাডেমি (Foreign-Service-Academy)র রেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এ বিষয়গুলো সমন্বয়ের চেষ্টা করছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন (Mo-Touhid-Hossain) যিনি বর্তমানে বার্লিন (Berlin) সফরে রয়েছেন এবং ১৬ মে দেশে ফেরার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
নিয়োগ, সমালোচনা ও পেছনের প্রেক্ষাপট
গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর মো. জসীম উদ্দিনকে অনেক সিনিয়র কর্মকর্তাকে পেছনে ফেলে পররাষ্ট্র সচিব পদে নিয়োগ দেয়া হয় অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে। তাকে নিয়োগ দেয়া হয় অনেকটাই নীরবে এবং বিএনপি (BNP) সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিতও পাওয়া যায়। নিয়োগের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওয়েবসাইটে তার নাম আপডেট করা হলেও অফিস আদেশ প্রকাশ হয়নি। ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ তার অবসরোত্তর ছুটি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
পেশাগত জীবন ও অর্জন
তিনি চীন (China), কাতার (Qatar) ও গ্রিস (Greece)-এ রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া নয়াদিল্লি (New-Delhi), ওয়াশিংটন ডিসি (Washington-DC), টোকিও (Tokyo) ও ইসলামাবাদ (Islamabad)-এ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৮ সালে এথেন্সের দূতাবাস তার নেতৃত্বে জনপ্রশাসন পুরস্কার অর্জন করে।
সাক্ষাৎকারের অনুরোধে নীরবতা
পররাষ্ট্র সচিবের দপ্তরে যোগাযোগ করে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করলেও সচিব ‘বিদায়ের প্রস্তুতিতে রয়েছেন’ উল্লেখ করে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হননি।