ধনী মধ্যপ্রাচ্যীয় রাষ্ট্র সৌদি আরবে (Saudi Arabia) বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমিকদের ওপর চলমান নির্যাতন, অবহেলা ও মৃত্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ছে। সম্প্রতি এক বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যুর পর মরদেহ আটকে রাখার ঘটনা চরম নিষ্ঠুরতার নজির হিসেবে আলোচিত হচ্ছে।
প্রতিবেদন প্রকাশ: আন্তর্জাতিক সংস্থার উদ্বেগ
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (Human Rights Watch) ও ফেয়ার স্কয়ার যৌথভাবে বুধবার (১৪ মে) এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে সৌদিতে দক্ষিণ এশীয় শ্রমিকদের জীবনমান ও নিরাপত্তার ভয়াবহ অবস্থা তুলে ধরে। প্রতিবেদনে বলা হয়, অধিকাংশ শ্রমিক বৈদ্যুতিক শক, উঁচু ভবন থেকে পড়ে যাওয়া কিংবা সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন। অথচ মৃত্যুর প্রকৃত কারণ তদন্ত হয় না এবং সংশ্লিষ্ট পরিবারকে সঠিক তথ্য দেওয়া হয় না।
মরদেহ আটকে রাখা: মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন
প্রতিবেদনে বিশেষভাবে আলোচিত একটি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে, যেখানে এক বাংলাদেশি শ্রমিক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। কিন্তু সৌদি মালিক মরদেহ আটকে রেখে জানিয়ে দেন—শুধুমাত্র মরদেহ দেশে পাঠিয়ে দাফন করলেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
দীর্ঘসূত্রতা ও তথ্য গোপন: পরিবারগুলো বঞ্চিত
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, অনেক সময় সৌদি কর্তৃপক্ষ ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে, যাতে মৃত্যুর প্রকৃত তথ্য গোপন থাকে। এর ফলে পরিবারগুলো বছরের পর বছর ক্ষতিপূরণের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। যেমন, এক নেপালি শ্রমিকের পরিবার ক্ষতিপূরণ পেতে ১৫ বছর সময় নিয়েছে।
বিশ্বকাপের আগে শ্রমিক সুরক্ষার প্রশ্ন
এই প্রতিবেদন এমন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে, যখন সৌদি আরব ২০৩৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য অবকাঠামো নির্মাণে ব্যস্ত। এতে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু সুরক্ষা ব্যবস্থার অভাবে আরও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মন্তব্য
মিনকি ওয়ার্ন (Minky Worden), হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ পরিচালক, বলেন, “শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সৌদি আরব ও ফিফা (FIFA) উভয়ের দায়িত্ব। কাতারের মতো নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ ও শ্রমিক সুরক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হবে সৌদি আরবকেও।”
তিনি আরও বলেন, “শুধু বিশ্বকাপ নয়, সৌদি ভিশন ২০৩০ (Saudi Vision 2030) বাস্তবায়নের প্রতিটি পর্যায়ে শ্রমিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উন্নয়ন আর মানবাধিকারের টানাপোড়েনে ভারসাম্য আনতে হলে আন্তর্জাতিক চাপ এবং স্বচ্ছ জবাবদিহিতা জরুরি।