‘চিকেনস নেক’ করিডরে ভারতের সামরিক মহড়া: দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে উত্তেজনার বার্তা?

মাত্র ১৭ কিলোমিটার চওড়া চিকেনস নেক (Chicken’s Neck) করিডর, যা ভারতের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করে, সেই স্পর্শকাতর এলাকাতেই সম্প্রতি চালানো হয়েছে ভারতের যুদ্ধকালীন সামরিক মহড়া ‘তিস্তা প্রহার’ (Teesta Prahar)। বিশ্লেষকদের মতে, এটি নিছক সামরিক প্রশিক্ষণ নয়, বরং একটি কৌশলগত বার্তা, যা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।

কৌশলগত অবস্থান ও মহড়ার লক্ষ্য

পশ্চিমবঙ্গের তিস্তা ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জ (Teesta Field Firing Range)-এ অনুষ্ঠিত এই মহড়ায় অংশ নেয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন শাখা। ব্যবহৃত হয় আর্টিলারি, ট্যাংক, হেলিকপ্টার, সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল এবং অত্যাধুনিক ড্রোন। গোহাটি (Guwahati)-তে এক বক্তব্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানান, এই মহড়ার উদ্দেশ্য ছিল নদীঘেরা অঞ্চলে সম্মিলিত যুদ্ধপ্রস্তুতির সক্ষমতা যাচাই করা।

ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

এই মহড়ার সময়কাল এবং প্রেক্ষাপট ঘিরেই প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন বিশ্লেষক। বিশেষ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) এর সাম্প্রতিক মন্তব্য—যেখানে তিনি বলেন, “বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে যুদ্ধ প্রস্তুতি নেওয়ার বিকল্প নেই,”—এর পরপরই মহড়াটি হওয়াকে কাকতালীয় মনে করছেন না অনেকেই।

লন্ডনভিত্তিক বিশ্লেষক প্রিয়জিত দেব সরকার (Priyojit Deb Sarkar) বলেন, ‘‘এই মহড়া বাংলাদেশের প্রতি একটি সূক্ষ্ম, কৌশলগত বার্তা। যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে একধরনের প্ররোচনার মধ্যেও ফেলতে পারে।’’

শান্তির বদলে প্রস্তুতির আওয়াজ

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই মহড়া কেবল প্রশিক্ষণ নয়, বরং ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিবেশীদের উদ্দেশ্যে একটি মনস্তাত্ত্বিক বার্তা। ড. ইউনূস শান্তিপ্রিয় অবস্থান জানালেও তাঁর যুদ্ধ প্রস্তুতির বক্তব্য দিল্লির কৌশলগত অস্বস্তি তৈরি করেছে বলে মত বিশ্লেষকদের।

এই প্রেক্ষাপটে ভারতের সেনা তৎপরতা এবং মহড়া নিঃসন্দেহে কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখন প্রশ্ন উঠছে—এই বার্তা বাংলাদেশের জন্য কী অর্থ বহন করে? উপমহাদেশে যেখানে শান্তি কাম্য, সেখানে এখন যেন ‘প্রস্তুতির’ আওয়াজই জোরালো।