অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে সংবাদমাধ্যমে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ কমলেও মবের (জনতা/গোষ্ঠীর) হুমকির কারণে ‘সেল্ফ সেন্সরশিপ’-এ ফিরে যাচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান—এমন মন্তব্য করেছেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন (Media Reform Commission) প্রধান কামাল আহমেদ (Kamal Ahmed)।
শনিবার (১৭ মে) এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) নেতৃত্বাধীন সরকারের পর গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে হস্তক্ষেপ প্রায় বন্ধ হয়েছে। তবে এক নতুন ধরনের ভয় ঢুকে পড়েছে—মব হুমকি।” তিনি জানান, এই প্রবণতা গণমাধ্যমকে আবারো ‘সেল্ফ সেন্সরশিপ’ বা আত্ম-নিয়ন্ত্রণের পথে ঠেলে দিচ্ছে।
সরকারের হস্তক্ষেপ কমেছে
কামাল আহমেদ বলেন, “৫ আগস্টের আগে প্রায় প্রতিদিন সরকারি কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার তরফ থেকে সম্পাদকদের ফোন আসত—‘এই শিরোনামটা পাল্টান’, ‘এই রিপোর্টটি দেখাবেন না’। এখন আর কোনো দিক থেকেই এমন ফোন আসছে না। সম্পাদকীয় সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ বন্ধ হওয়া একটি বড় পরিবর্তন।”
তিনি দীর্ঘদিন বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস (BBC World Service) এবং জাতিসংঘ রেডিও (UN Radio)-সহ দেশি ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। তার অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, বর্তমানে সাংবাদিকদের চাকরির অনিশ্চয়তা, সংবাদপত্র ব্যবসার স্বচ্ছতার অভাব এবং সম্পাদকীয় স্বাধীনতায় মালিকানার প্রভাবও সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে।
ইতিবাচক অগ্রগতি
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে কামাল আহমেদ বলেন, “চলতি বছর বাংলাদেশে কোনো সাংবাদিক নিহত হয়নি—এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক পরিবর্তন।”
তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে মালিক-সম্পাদক সম্পর্ক, চাকরির নিরাপত্তা, সংবাদপত্রের আর্থিক স্বচ্ছতা এবং সেন্সরশিপ প্রতিরোধে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা ও বিকাশের জন্য সরকার, সমাজ ও প্রতিষ্ঠানসমূহের আরও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করেন তিনি।