সীমান্ত দিয়ে পুশইনের মাধ্যমে অবৈধভাবে প্রবেশকারী ভারতীয় নাগরিক ও রোহিঙ্গাদের বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিক ও কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। ভারতীয় নাগরিক হলে প্রোটোকল অনুযায়ী ফেরত পাঠানো হবে, আর যদি প্রকৃত বাংলাদেশি হন তাহলে তাঁদের পুশব্যাকের সুযোগ নেই—এমনটাই জানালেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (Lt. Gen. (Retd.) Md. Jahangir Alam Chowdhury)।
শনিবার (১৭ মে) সাতক্ষীরা (Satkhira) জেলার শ্যামনগর (Shyamnagar) উপজেলায় সুন্দরবনের (Sundarbans) দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে বয়েসিং ভাসমান বিওপি (Boyesing Floating BOP) উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ভারতীয় পুশইনের প্রতিবাদ
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ভারতের পুশইনের ঘটনায় আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। তবে এটিকে উসকানিমূলক মনে করছি না।” তিনি জানান, কিছু পুশইন হওয়া ব্যক্তির কাছে ইউএনএইচসিআর (UNHCR) কার্ড রয়েছে এবং কয়েকজন রোহিঙ্গাও রয়েছে। বিষয়টি কূটনৈতিক চ্যানেলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, “ভারতে যদি কোনো অবৈধ বাংলাদেশি থেকে থাকে, তাহলে তাঁদেরও আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় ফেরত পাঠানো উচিত। আমরাও তাদের সে অনুরোধ জানিয়েছি।”
কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং ভারত সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা (Foreign Affairs Adviser), নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান (Dr. Khalilur Rahman) ও বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমেও বিষয়টি তোলা হয়েছে।
সীমান্তে তৎপরতা ও সতর্কতা
তিনি বলেন, “গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া (Brahmanbaria) সীমান্ত দিয়ে পুশইনের চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু বিজিবি (BGB) ও স্থানীয় জনগণের প্রতিরোধে তা ব্যর্থ হয়।”
তিনি আরও বলেন, “আপনারা সবাই যদি সহযোগিতা করেন, ভারত পুশইন করতে পারবে না। বিজিবির পাশাপাশি জনগণ এবং সাংবাদিকদের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
বিজিবির হুঁশিয়ারি
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)–এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী (Maj. Gen. Mohammad Ashrafuzzaman Siddiqui) সতর্ক করে বলেন, “পুশইনের মাধ্যমে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা প্রবেশ করতে পারে, যা দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তবে আমরা আশা করি, এসব অপতৎপরতা প্রতিহত করতে পারব।”
নীতিগত অবস্থান অটুট
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুনর্ব্যক্ত করেন, “আমরা কাউকে পুশইন করি না। ভারতের ক্ষেত্রেও চাই যে, তাদের দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের প্রপার চ্যানেলের মাধ্যমে ফেরত পাঠানো হোক, ঠিক যেমন আমরা করি।”
তিনি বলেন, “আমরা ভারতকে অনুরোধ করেছি যেন সীমান্ত পেরিয়ে জোরপূর্বক কাউকে পাঠানো না হয়। বরং কূটনৈতিক প্রক্রিয়াতেই সমস্যার সমাধান হোক।”