আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারসহ ঘনিষ্ঠ ১০টি ব্যবসায়ী গ্রুপের বিপুল সম্পদ ও অর্থপাচারের ঘটনা নিয়ে ছয়টি সংস্থা তদন্ত করছে। এরই মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (United Arab Emirates – UAE) এসব নেতাদের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের খোঁজ মিলেছে। তদন্তে উঠে এসেছে যে, তারা আমিরাতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছেন।
সম্পদ উদ্ধারে আইনগত পদক্ষেপ
এই অর্থপাচার এবং বিদেশে বিনিয়োগের ঘটনা তদন্ত করছে— বাংলাদেশ ব্যাংক (Bangladesh Bank), দুর্নীতি দমন কমিশন (Anti-Corruption Commission – ACC), বিএফআইইউ (BFIU), বিএসইসি (BSEC) ও সিআইডি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্টেন্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স প্রধান ড. আহসান এইচ মনসুর (Dr. Ahsan H Mansur) আমিরাতে অবস্থান করছেন এবং সেখানে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইউএই (Central Bank of UAE)–এর সঙ্গে বৈঠক করছেন।
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে সম্পদের তথ্য
-
সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও আরামিট গ্রুপ (Aramit Group) কর্ণধার সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ (Saifuzzaman Chowdhury Javed)–এর নামে ২২৮টি ফ্ল্যাটের সন্ধান মিলেছে।
-
বেক্সিমকো গ্রুপ (Beximco Group) কর্ণধার সালমান এফ রহমান (Salman F Rahman) এর বিরুদ্ধে ৮.৩ মিলিয়ন ডলার পাচারের তথ্য মিলেছে। তিনি শেল কোম্পানির মাধ্যমে আমিরাতসহ অন্যান্য দেশে ব্যবসা চালাচ্ছেন।
-
ওরিয়ন গ্রুপ (Orion Group) প্রধান ওবায়দুল করিম (Obaidul Karim) ইউরোপে নাগরিকত্ব নিয়ে আমিরাতে বিনিয়োগ করেছেন।
-
জেমকম গ্রুপ (Gemcom Group)–এর প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত কাজী শাহেদ আহমেদ (Kazi Shahed Ahmed)–এর উত্তরাধিকারীদের নামেও সম্পদ রয়েছে।
-
নাসা গ্রুপ (Nasa Group) কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদার (Nazrul Islam Mazumder) ও তাঁর পরিবারের নামে শেল কোম্পানির মাধ্যমে ব্যবসার তথ্য মিলেছে।
-
শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) পরিবারের এক সাবেক আত্মীয়ের নামেও আমিরাতে বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যা প্রধানমন্ত্রিত্বকালীন সময়ের অর্থ পাচারের মাধ্যমে অর্জিত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সম্পদ উদ্ধার
বিএফআইইউ জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ১০টি দেশে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে: কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, হংকং, চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
সরকার এই দেশগুলোর সঙ্গে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্টেন্স চুক্তি (এমএলএটি) করার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। মালয়েশিয়া ও ইউএই-এর সঙ্গে চুক্তি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।