দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বহুদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। দেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলা (Bhola)কে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত করতে নির্মাণ হতে যাচ্ছে দেশের দীর্ঘতম সেতু। প্রায় ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই ভোলা-বরিশাল সেতু (Bhola-Barisal Bridge) পদ্মা সেতুর চেয়েও প্রায় দ্বিগুণ লম্বা, অথচ খরচ হবে অর্ধেক।
প্রকল্পের ঘোষণা আসছে শিগগিরই
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) অচিরেই এই প্রকল্প নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারেন। ইতোমধ্যে সেতুর সম্ভাব্য নকশা ও বাজেট চূড়ান্ত হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যেই প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভোলা-বরিশাল: ফেরির ভোগান্তির অবসান
বর্তমানে ভোলা থেকে বরিশালে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। ভেদুরিয়া-লাহারহাট (Veduria-Laharhat) ফেরি সার্ভিসে যাত্রী ও যানবাহনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়, যা পণ্য পরিবহন ও সাধারণ যাতায়াতে দুর্ভোগ তৈরি করে।
সেতুটি নির্মিত হলে ভোলা থেকে বরিশালে সড়কপথে পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র ৩০-৪০ মিনিট। ফলে ২৪ ঘণ্টাই দ্বীপ জেলার সঙ্গে দেশের মূলভূখণ্ডের সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু
এই সেতুটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু, যেখানে ভারতের অটল সেতু (২১.৮ কিমি) সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুর রউফ (Md. Abdur Rouf) জানিয়েছেন, চারলেনবিশিষ্ট সেতুটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা, যা পদ্মা সেতুর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা
সেতুটি নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাপানের প্রতিষ্ঠান ‘মিয়াগাঁও’। এছাড়া কোরিয়া ও চীনের কয়েকটি কোম্পানিও আলোচনায় রয়েছে। তবে বিদেশি অর্থায়ন না এলে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণে প্রস্তুত রয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত।
শীর্ষ কর্মকর্তাদের পরিদর্শন
সেতুর সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শনে সম্প্রতি ভোলা সফর করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মঈনুদ্দিন (Sheikh Moinuddin) ও সেতু বিভাগের সচিব মো. আবদুর রউফ। তারা জানান, ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।
জাপান সফরে চুক্তি হতে পারে
আগামী ২৫ বা ২৬ মে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাপান সফরে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, সফর সফল হলে জাপান সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোলা-বরিশাল সেতু নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে।
দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে নতুন দিগন্ত
নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, এই সেতু কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে না, এটি দক্ষিণাঞ্চলের শিল্প, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনা খুলে দেবে। এটি একটি অবকাঠামোগত অর্জনের চেয়ে বেশি, বরং জাতীয় পুনর্জাগরণের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে।