বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার (Interim Government) নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি নানা সংস্কারমূলক ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। তবে এসব সিদ্ধান্তের ম্যান্ডেট বা এখতিয়ার নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভিযোগ
রাখাইনে (Rakhine) মানবিক করিডোর, চট্টগ্রাম বন্দর (Chittagong Port) বিদেশি ব্যবস্থাপনায় দেওয়া, আইএমএফ (IMF) ঋণের বিনিময়ে এনবিআর (NBR) বিলুপ্তিসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারের একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ কতটা গ্রহণযোগ্য, সে নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
এছাড়াও কাতারকে (Qatar) বাংলাদেশে সামরিক কারখানা স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার ঘোষণাও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষকদের অবস্থান
বিএনপি (BNP) এই সব সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেছে, বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরির নামে ‘সার্কাস’ চলছে। দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু (Shamsuzzaman Dudu) বলেন, “প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ব্যবসায়ী মানুষ, তিনি রাষ্ট্রকে নিয়ে ব্যবসা করতে চাইছেন।”
সিপিবি (CPB)’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স (Ruhin Hossain Prince) একে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেন এবং প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
গণসংহতি আন্দোলনের (Gonoshonghoti Andolon) প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি (Zonayed Saki) বলেন, এই সরকার অন্তর্বর্তী, তাই জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করা জরুরি।
বিনিয়োগ সম্মেলনে অনুপস্থিত বিএনপি-বিজেপি
১৩ মে ঢাকায় বিডা (BIDA) আয়োজিত বিনিয়োগ উন্নয়ন বিষয়ক মতবিনিময় সভায় ১৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১৭টি অংশ নিলেও বিএনপি ও বিজেপি অংশ নেয়নি। বিএনপির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “নির্বাচনের তারিখ না জানিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রচেষ্টা বিভ্রান্তিকর বার্তা দিচ্ছে।”
অধ্যাপক আইনুল ইসলাম বলেন, “নির্বাচিত সরকার ছাড়া বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাবে না। দেশি ও বিদেশি উভয় বিনিয়োগই কমছে।”
প্রধান উপদেষ্টা ও তার দপ্তরের বক্তব্য
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “এই সরকার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এসেছে। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো নয়।” তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনায় দক্ষ বিদেশিদের যুক্ত করাটা বড় অর্থনৈতিক সংস্কার। রাখাইন করিডোরও একটি মানবিক বিষয়। আমরা এসব এড়িয়ে যেতে পারি না।”
তিনি সমালোচনার জবাবে বলেন, “বাম দলগুলো বাংলাদেশকে বনসাঁই বানিয়ে রাখতে চায়।”
চট্টগ্রাম বন্দর ও জাতীয় স্বার্থ
চট্টগ্রাম বন্দরের বিদেশি ব্যবস্থাপনার বিরোধিতায় বাম গণতান্ত্রিক জোট আন্দোলনে নেমেছে। কক্সবাজার (Cox’s Bazar) ও চট্টগ্রাম অভিমুখে লংমার্চসহ কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে সিপিবি। তারা বলছে, করিডোর ও বন্দর প্রশ্নে দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, অর্থনীতি জড়িত।
বিনিয়োগ কমছে, পরিসংখ্যানে প্রমাণ
বাংলাদেশ ব্যাংক (Bangladesh Bank)’র তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এফডিআই (FDI) প্রবাহ কমেছে ২৬% এবং মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমেছে ২৮.৬৮%। এতে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ কমারও ইঙ্গিত মিলেছে।
ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিতর্কমূলক চারটি সিদ্ধান্তকে ঘিরেই মূলত বিতর্ক:
1. চট্টগ্রাম বন্দরের বিদেশি ব্যবস্থাপনা
2. রাখাইন মানবিক করিডোর
3. কাতারে সামরিক বিনিয়োগের আহ্বান
4. সেন্ট মার্টিন নিয়ে অস্বচ্ছতা
এ বিষয়ে বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন (Chowdhury Ashiq Mahmud bin Harun)–এর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।