কিশোরগঞ্জ (Kishoreganj)-০৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন (Nazmul Hasan Papon) এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবুও তার বর্তমান অবস্থান নিয়ে রহস্য কাটছে না। কেউ বলছেন তিনি এখনও লন্ডনে অবস্থান করছেন, আবার কেউ বলছেন তিনি ইতোমধ্যে দেশে ফিরে আত্মগোপনে রয়েছেন।
বিদেশে না দেশে? রহস্যে পাপন পরিবার
সরকার পতনের আগে থেকেই নাজমুল হাসান পাপন সপরিবারে লন্ডন অবস্থান করছিলেন বলে দাবি করেছে একাধিক সূত্র। তবে একটি সূত্রের মতে, তিনি লন্ডন থেকে ফিরে বর্তমানে দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন।
সম্প্রতি সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ (Abdul Hamid) জুলাই আন্দোলনের সহিংসতার মামলার পর দেশ ছাড়েন। এরপরই আলোচনায় আসে পাপনের নাম। সালমান এফ রহমান (Salman F Rahman) গ্রেফতারের পর তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে আলোচনায় উঠে আসে পাপন।
দুর্নীতি, ক্যাসিনো ও অবৈধ সম্পদের অভিযোগ
২০১৯ সালে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে নাজমুল হাসান পাপনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি তখন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) (Bangladesh Cricket Board) ও আবাহনী লিমিটেড (Abahani Limited) এর গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকাকালীন ক্যাসিনো জুয়া চালু করতে সহায়তা করেন।
দুদকের উপপরিচালক সাইদুজ্জামান (Saiduzzaman) ২০২৫ সালের ১৬ মার্চ ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (Dhaka Metropolitan Senior Special Judicial Magistrate Court)-এ পাপন এবং তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে দেশত্যাগ নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। বিচারক জাকির হোসেন গালিব (Jakir Hossain Galib) আবেদন মঞ্জুর করেন।
দুদক বলেছে, নাজমুল হাসান পাপন সরকারি অর্থ ও বিসিবির অর্থ আত্মসাৎ করে দেশে-বিদেশে বিপুল জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। এসব সম্পদ রয়েছে গাজীপুর (Gazipur), ঢাকা (Dhaka)সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এবং বিদেশে দুবাই (Dubai), যুক্তরাষ্ট্র (USA), কানাডা (Canada) তেও রয়েছে।
সহযোগীদের ভূমিকা ও সাম্প্রদায়িক দখল
পাপনের অবৈধ অর্থ পাচারে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে দুবাই প্রবাসী ব্যবসায়ী ও কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদের (Kuliarchar Upazila Parishad) সাবেক চেয়ারম্যান ইয়াসির মিয়া (Yasir Mia)-এর বিরুদ্ধে। এছাড়াও পাপনের অবৈধ টাকার আরেক বাহক হিসেবে পরিচিতি রয়েছে ভৈরব আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা মোশাররফ হোসেন মিন্টু (Mosharraf Hossain Mintu)-র।
২০২২ সালে কুলিয়ারচরের ঘোষপাড়ার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শ্মশান দখলের ঘটনায়ও পাপনের নাম উঠে আসে। অভিযোগ রয়েছে, ইয়াসির মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে তিনি শ্মশান গুঁড়িয়ে দখল অভিযানে অংশ নেন। ধারণা করা হয়, দুবাইয়ে তাদের মধ্যে হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে বলেই তারা বিচার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন।
কোথায় পাপন?
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গ্রেফতার হন। এরপর থেকেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—নাজমুল হাসান পাপন কোথায়?